মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল ক্ষমতায় থাকার পরও দেশ কেন এত সাম্প্রদায়িক

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আজ শনিবার যুব কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ
ছবি: দীপু মালাকার

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল সরকারে থাকার পরও দেশ কেন এত সাম্প্রদায়িক হলো, সেই প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। নইলে সামনে এগোনো যাবে না।

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আজ শনিবার আয়োজিত যুব কর্মশালা ২০২৩–এ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ এই কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালার অতিথি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে নিজেদের সংখ্যালঘু হিসেবে ভাবার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। রাষ্ট্র, রাজনীতি, বিশেষ করে সংবিধান জনসংখ্যার হারে জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম সংখ্যালঘু হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য নয়। সমান নাগরিক অধিকার এবং মর্যাদা নিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বসবাস নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করছি।’

রানা দাশগুপ্ত
ছবি: প্রথম আলো

সাম্প্রদায়িক হামলার কথা উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাধারণত গরিব হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ফেসবুক পরিচয় (আইডি) ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হয়। সেটাকে অজুহাত হিসেবে সামনে এনে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়। তিনি প্রশ্ন করেন, যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায়, আজ পর্যন্ত তাদের কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কয়জনকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়েছে?

সর্বজনীন দুর্গাপূজার সময় কোনো রাজনৈতিক দলকে কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, পূজার সময় রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া হলে ধরে নেওয়া হবে তাঁরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বন্ধু নন। তিনি রাজনীতির দাবা খেলার ঘুঁটি হিসেবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ব্যবহার না করার আহ্বান জানান।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ছবি: প্রথম আলো

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল সরকারে থাকার পরও দেশে কেন এত সাম্প্রদায়িকতা, সেই প্রশ্ন তোলেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দল এবং সহযোগী বামপন্থীরা একসঙ্গে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও দেশ কেন এত সাম্প্রদায়িক হলো?

দেশের সংবিধানকেই ধর্মীয়করণ করা হয়েছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের সাম্প্রদায়িকীকরণ হয়েছে। আর অষ্টম সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম এসেছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বলা হয়েছে রাষ্ট্রধর্মও থাকবে এবং অন্য ধর্মগুলোও পালন করার সুযোগ থাকবে, যা সুকুমার রায়ের হাঁস ও শজারুর মিশ্রণে হওয়া ‘হাঁসজারু’ কবিতার মতো।

রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া যাবে না উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা চাইলে স্বাধীনভাবে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। নিজেদের শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে। কিন্তু সেটা না করে শক্তিগুলো বরং অন্যের হাতে ব্যবহৃত হয়েছে।

পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ
ছবি: প্রথম আলো

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে দেশকে হিন্দুশূন্য করার প্রয়াস পরিকল্পিতভাবে চলছে। এটাকে রোধ করা সম্ভব হয়তো হবে না, কারণ আজকে কমতে কমতে দেশে হিন্দুদের সংখ্যা ৮ ভাগে এসে পৌঁছেছে। সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরেকটু কম।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ঠেকানো সম্ভব। ছোট ছোট হাতের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেই রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার দাবানল নেভাতে হবে।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্চিতা গুহ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ কর্মশালাটির আয়োজন করে সম অধিকার ও সমমর্যাদা অর্জনের চলমান সংগ্রামে সম্ভাবনাময় আগামীর নেতৃত্ব গঠনের লক্ষ্যে। এতে প্রায় ৩০০ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী যুবক অংশ নেন।