মহাসমাবেশের আগে ঢাকায় বিএনপির ৭৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার নতুন ও পুরোনো মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৭৮ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবারই তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
পুলিশ বলছে, দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা এবং বিস্ফোরণ দ্রব্য আইনের বিভিন্ন ধারার নতুন ও পুরোনো মামলায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপির সহ–আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে হঠাৎ পুলিশ গণহারে দলীয় নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করেছে। তাঁদের বিভিন্ন নতুন ও পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়েছে।
আইনজীবী, পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঢাকা মহানগর এলাকার মধ্যে ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা–পুলিশ বিএনপির ১৮ জন নেতা–কর্মীকে পুরোনো নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া রাজধানীতে ঢোকার সময় বংশাল থানা–পুলিশ নয়াবাজার এলাকা থেকে ১০ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আর কোতোয়ালি থানার পুলিশ নয়াবাজার থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ছাড়া দারুসসালাম থানা–পুলিশ ৫, পল্লবী থানা–পুলিশ ৬ ও শাহজাহানপুর থানা–পুলিশ ৪ বিএনপির নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া মতিঝিলে ১, পল্টনে ৫, রামপুরায় ২, সবুজবাগে ১, কদমতলীতে ৩, শ্যামপুরে ২, উত্তরা পূর্বে ২, উত্তরখানে ১, কামরাঙ্গীরচরে ৫, লালবাগে ২, ওয়ারীতে ৮ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর বাইরে নারায়ণগঞ্জে ৬, মানিকগঞ্জে ২ এবং ঢাকার সাভারে বিএনপির ১ এক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নারায়গণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক অভিযোগ করেন, ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলা ও গোয়েন্দা পুলিশ দলীয় নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে হঠাৎ করে পুরোনো ও নতুন গায়েবি মামলায় মহানগর পুলিশ তাঁদের অনেক নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের কাছে খবর আসছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ দলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।’
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নাশকতায় জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, কেবল তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। নিরীহ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
ভবঘুরে হিসেবে গ্রেপ্তার ১৩
মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে বংশাল থানার নয়বাজার থেকে যশোরের আকরাম আক্তারসহ (৩৮) ১০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য ৯ জন হলেন যশোরের অভয়নগরের সঞ্জুয় কুমার সেন (৩৯), ইকবাল হোসেন (৩৮), চুয়াডাঙ্গার ওয়াসিম ইফতেখারুল হক (৪৫), মির্জা ফরিদুল ইসলাম (৪৫), লিমন (৪০), ঝিনাইদহের জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৩), মাহবুব আলম (৩২), শাকিব আহম্মেদ (২৯) ও সাজেদুর রহমান (৫২)।
অন্যদিকে নয়াবাজার থেকে আজ বুধবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে কোতোয়ালি থানা–পুলিশ গ্রেপ্তার করে চুয়াডাঙ্গার রেজাউল করিম (৪৬), সাইফুল ইসলাম ও রাশিদুল ইসলামকে (২৫)। বংশাল ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় গ্রেপ্তার ১৩ জনকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় (ভবঘুরে অভ্যাসগত অপরাধী) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরে তাঁদের জামিন চান আইনজীবীরা।
যশোরের আকরামসহ কয়েকজনের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে যশোর, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানীতে প্রবেশের সময় এসব নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় ভবঘুরে, অভ্যাসগত ইত্যাদি অপরাধে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ যাঁদের গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা রয়েছে। সুতরাং এটা হয়রানি ছাড়া কিছু নয়।