৬২৮৮ কোটি টাকার ঋণের দায় চাপাচ্ছে গ্রাহকের ওপর

চট্টগ্রাম ওয়াসা
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম ওয়াসা গত এক যুগে ঋণের টাকায় পানি শোধনাগার নির্মাণ, নতুন সরবরাহ লাইন স্থাপন ও পয়োনিষ্কাশন লাইন নির্মাণের চারটি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। টাকার হিসাবে প্রায় ৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

এ জন্য তিনটি বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে ৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সংস্থাটি। আগামী বছর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা করে। তার আগেই ঋণ পরিশোধের দায় চাপাচ্ছে গ্রাহকের ওপর। পানির দাম একলাফে বাড়িয়েছে ৩৮ শতাংশ।

ওয়াসা সূত্র বলছে, যে চারটি প্রকল্প সংস্থাটি শুরু করেছে, তার মধ্যে একটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাকি তিনটির কাজ এখনো চলমান। আগামী বছরের ঋণ পরিশোধের প্রস্তুতি হিসেবে ছয় মাসের মাথায় দ্বিতীয় দফায় পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে পানির প্রতি ইউনিটের দাম আবাসিকে ১৮ ও বাণিজ্যিকে ৩৭ টাকা করে নেওয়া হবে। বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ আছে ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক ৭ হাজার ৭৬৭টি।

আরও পড়ুন

ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্যই পানির দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ। তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে পানির দাম এক দফা বাড়ানো হয়েছে। তবে ঋণ ব্যবস্থাপনায় আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ওয়াসার বড় চারটি প্রকল্প হলো ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) ও পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প।

ওয়াসা সূত্র জানায়, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প শেষ হয় ২০১৭ সালের জুনে। মোট ব্যয় ছিল ১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিয়েছে ৭৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকা দিয়েছে ২ হাজার ৮৯২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

অন্য দুটি প্রকল্পের একটি হলো ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় পানি সরবরাহের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে এটির কাজ শুরু হয়। কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯৯৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা হয়েছে।

এ প্রকল্পে ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। আরেকটি চট্টগ্রাম শহরের পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প। ১ হাজার ৮৯০ টাকার এ প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ঋণ পরিশোধে পানির দাম না বাড়িয়ে ওয়াসার উচিত সিস্টেম লস ও অন্যান্য চুরি বন্ধ করা।