বেশি নিয়োগ হয় গত এক বছরে (২০২২ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত)। এর মধ্যে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ১১০ জনকে। এর মধ্যে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে ছিলেন ৩২ জন। এ ছাড়া কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে ৫০ জন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ মার্চ পাঁচটি বিভাগে ২৩ জনকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ পান সাতজন। ৩০ জানুয়ারি পাঁচটি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয় ৩০ জনকে। বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ পান ছয়জন। এর আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর নিয়োগ পান ১০ জন, বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে ২ জন। একই বছর অক্টোবরে নিয়োগ পান ২৩ জন, বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে ১৭ জন। এরপর বিতর্কের মধ্যেই মার্চে নিয়োগ দেওয়া হয় ২৪ জনকে। অন্যদিকে গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৫০ জনকে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগ নিয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল গত বছরের মার্চে। ওই সময় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অর্থ লেনদেন নিয়ে পাঁচটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এসব ফোনালাপ ছিল উপাচার্য শিরীণ আখতারের ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল ও হিসাব নিয়ামক দপ্তরের কর্মচারী আহমদ হোসেনের সঙ্গে দুজন নিয়োগ প্রার্থীর। খালেদ মিছবাহুল উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বেও ছিলেন। ফোনালাপ ফাঁসের পর খালেদ মিছবাহুলকে ব্যক্তিগত সহকারীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এসব ফোনালাপে মূলত শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
নিয়োগ নিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন উপাচার্য শিরীণ আখতার। তিনি তাঁর কার্যালয়ে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদেরই শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হয়েছে। আর প্রয়োজনের ভিত্তিতে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, সংবিধি ও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সব শূন্য পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এরপর নিয়োগ বোর্ড প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নিয়োগের সুপারিশ করবে। পরে সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও প্রায় একই নিয়ম অনুসরণ করা হয়।
বর্তমান উপাচার্য ও প্রশাসনে যুক্ত শিক্ষকেরা অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক আলা উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদে যতগুলো নিয়োগ হয়েছে, সবকটি নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায়। কারণ, নিয়োগে আর্থিক লেনদেন নিয়ে ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল। এরপরও অতিরিক্ত নিয়োগ অব্যাহত আছে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। পাশাপাশি এখন প্রশাসনের ভেতরে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের দেনা-পাওনার হিসাবের গরমিলের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’
একযোগে পদত্যাগে অস্থিরতা
গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, প্রাধ্যক্ষ, সহকারী প্রক্টরসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ থেকে ১৬ শিক্ষক পদত্যাগ করেন। এরপর গতকাল পদত্যাগ করেন আরও তিনজন। লাগাতার পদত্যাগের ঘটনায় প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একটি অংশ।
এই লাগাতার পদত্যাগ নিয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতার সদ্য সাবেক প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে দায়ী করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘রবিউল হাসান ভূঁইয়া বিভিন্ন পদে কিছু কিছু নিয়োগ দিয়েছেন। আরও কিছু নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি দিইনি। এসব কারণেই পদত্যাগের ঘটনা ঘটল।’ তবে রবিউল হাসান ভূঁইয়া উপাচার্যের এসব বক্তব্য ভিত্তিহীন দাবি করলেও বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
পদত্যাগ ও নিয়োগে বিতর্কের জন্য উপাচার্যের ভূমিকাকেই দায়ী করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে প্রশাসনে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক থেকে কর্মচারী নিয়োগ—নানা সময়ে নানা অভিযোগ এসেছে। কারণ, যে প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটি অবৈধ। এমনকি ইচ্ছেমতো নিয়োগ দিতে সিন্ডিকেটে একটি সিদ্ধান্তও হয়েছে। এসব বন্ধ হওয়া উচিত।