একসঙ্গে ফুটবল খেলা, পুকুরে গোসল করার বন্ধুটি এখন কবরে

বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে চলত পুকুরে গোসল, ফুটবল, ক্রিকেট খেলা। খুব গরম পড়লে কোল্ড ড্রিংকস খেতেও ডাক পড়ত বন্ধুদের। সেই বন্ধুদের একজন এখন নেই। তাকে কবরে শুইয়ে চোখের জলে ভিজে সে গল্পেরই ঝুড়ি খুলেছে বাকি বন্ধুরা।

আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার খন্দকিয়া গ্রামে কবরস্থানের সামনে দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনায় নিহত বন্ধু মোসহাব আহমেদ হিশামের সঙ্গে কাটানো সময়ের গল্প বলছিল মুনতাসির মনসুর।

মোসহাব ও মুনতাসির সহপাঠী ও বন্ধু। দুজনই এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার সকালে খন্দকিয়া গ্রামের আরএনজে কোচিং সেন্টার থেকে মিরসরাইতে বেড়াতে যায় মোসহাব। ফেরার পথে বড়তাকিয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন ১১ জন, আহত হন অন্তত ৫ জন।

মাইক্রোবাসের চালক, সহকারী ছাড়া বাকিরা সবাই কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও ছাত্র। পরে রাতে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁদের লাশ হস্তান্তর করে রেলওয়ে পুলিশ।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় স্থানীয় কে এস নজু মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে মোসহাবকে দাফনের জন্য পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কথা হয় মোসহাবের বন্ধুদের সঙ্গে।

মুনতাসির মনসুর প্রথম আলোকে বলে, মারা যাওয়ার আগের দিন গত বৃহস্পতিবার বিকেলেও বন্ধুরা মিলে ফুটবল খেলেছে। পুকুরে একসঙ্গে গোসল করেছে। হাতের ইশারায় পুকুরটি দেখিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে মুনতাসির। স্মৃতির ঝুলিতে কত কী জমানো এখনো। বলে ওঠে, ‘এখন গরম লাগলে কোল্ড ড্রিংকস খাওয়ার জন্য আমাদের আর ডাকবে না মোসহাব।’

মুনতাসিরের বারবার মনে হচ্ছে, কেন সেদিন মোসহাবকে যেতে বারণ করেনি। মোসহাব না গেলে হয়তো বেঁচে যেত। মুনতাসির যখন মোসহাবের কথা বলছিল অন্য বন্ধুরা চোখের জলে ভাসছিল। আরেক বন্ধু শাহাদাত হাসান বলল, মোসহাব পড়ালেখা ও খেলাধুলায় খুবই ভালো ছিল।

বন্ধু মো. সাঈদ এখনো বুঝতে পারছে না পড়ালেখার নানা বিষয়ে আর কার সঙ্গে আলোচনা করবে। চাচা আলী আকবর বললেন, মোসহাবের মা, ভাই ও বোন সবাই কানাডায় থাকেন। এসএসসি পরীক্ষা শেষ করার পর তার সেখানে চলে যাওয়ার কথা ছিল।

কে এস নজু মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিউল আলম বললেন, মোসহাবের শূন্যতা কিছুতেই পূরণ হবে না। পড়াশোনায় মনোযোগী মোসহাবের ফলাফল ভালো ছিল। ব্যবহারও ছিল সুন্দর। এসএসসিতে ভালো ফল করত সে। কিন্তু তার আগেই প্রিয় ছাত্রকে হারিয়ে ফেললেন।