তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজন ‘দ্য ওয়ে’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ‘দ্য ওয়ে’ বা ‘আগামীর পথ’ শীর্ষক দিনব্যাপী বিশেষ আয়োজন। গতকাল রোববার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ব্র্যাক ইয়ুথ প্রোগ্রামের সদস্য, তরুণ পেশাজীবী, উন্নয়ন সহযোগী, গণমাধ্যম এবং ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব, উদ্ভাবন ও অ্যাডভোকেসিতে যুক্ত করতে উৎসাহিত করা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের ঊর্ধ্বতন পরিচালক মৌটুসী কবীর, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ডেভিড ডাউল্যান্ড, লার্নিং অ্যান্ড টিচিং ইনোভেশন সেন্টারের পরিচালক মো. গোলাম সামদানী ফকির, ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশনস খায়রুল বাশার, অপারেশনস ডিরেক্টর সাজেদুল করিম, স্টুডেন্ট লাইফের জয়েন্ট ডিরেক্টর তাহসিনা রহমান প্রমুখ।
‘দ্য সায়েন্স অব ফাইন্ডিং আ ওয়ে’ শীর্ষক সেশনে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘সমাজ যা বলছে, সেই গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে তরুণেরা যে যে ধরনের পেশাতেই থাকুন না কেন, তাঁরা পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারেন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লক্ষ্য অনুসরণ করতে হবে। কারণ, পরিবর্তনের উদ্যোগগুলো নিয়ে কাজ শুরু হলে তা স্বাভাবিকভাবেই অংশীদার এবং রিসোর্সকে আকৃষ্ট করে।’
একপর্যায়ে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদের যাত্রা এবং ব্র্যাকের ‘সলিউশন ইকোসিস্টেম’ বা সমাধান কাঠামোর উদাহরণ টেনে আসিফ সালেহ বলেন, ‘এ সিস্টেমে উন্নয়ন কর্মসূচি এবং সামাজিক উদ্যোগগুলো একসঙ্গে কাজ করছে। আর লক্ষ্য হতে হবে উচ্চাভিলাষী এবং যে পরিবর্তনের অঙ্গীকার করবেন, সেটি হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। সেটির জন্য দরকার অধ্যবসায় ও টেকসই অগ্রগতি। এর সঙ্গে সন্নিবেশিত করতে হবে অ্যাকটিভিজম, পলিসি, উন্নয়ন এবং এর বাণিজ্যিক দিকগুলো।
‘স্পার্কটক’ পর্বে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়ন থেকে আসা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐতি রায় তুলে ধরেন তাঁর জীবন ও সংগ্রামের গল্প। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ব্র্যাকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহিনুর সাইফ।
সংসদীয় ব্যবস্থার আদলে বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করে ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ডিবেট ক্লাব’। পরে ‘বিয়ন্ড ওয়ান ওয়ে’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন দ্য ডেইলি স্টারের চিফ বিজনেস অফিসার তাজদীন হাসান, ‘মাম্মিকিডস’–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত আনজুম পলকা এবং ইটস হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বাশিরা হারুন।
‘দ্য ওয়ে অব হারমনি’ শীর্ষক সেশনে ছিল আরমিন মুসা ও তাঁর দলের সম্মিলিত ‘মিউজিক থেরাপি’ পরিবেশনা। এ ছাড়া ‘ডিজাইন কোয়েস্ট: সলভ ফর সোসাইটি’ শীর্ষক সেশন পরিচালনা করে ‘মেকা টিম’।
তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্যোগের পাশাপাশি ব্র্যাকের ‘ওয়াটার হ্যাকাথন’ এবং ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’–এর অংশগ্রহণকারীরা উপস্থাপন করেন তিনটি প্রকল্প—যত্নের দোকান, ইকো কেয়ার ও উজ্জীবন। ব্র্যাকের রোবোটিকস ক্লাব ও এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইনোভেশন ক্লাব প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে পাঁচটি প্রকল্প প্রদর্শন করে।
অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে উপাচার্য সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘দানেই প্রকৃত পরিতৃপ্তি। আমরা যখন নিজেদের ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করতে পারি ও সেগুলো পূরণের জন্য সৃজনশীল সমাধান খুঁজে পাই, তখনই এটি সম্ভব হয়।’
অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের বিভিন্ন উদ্যোগও তুলে ধরা হয়। সেগুলোর মধ্যে ছিল সিসিপির ‘আমার বন’ ও ‘জলবায়ু অভিযোজন’ প্রকল্প, ইউডিপির ‘প্লাস্টিক দূষণ রোধ’ কার্যক্রম, বিআইইডির ‘শিশুবান্ধব শিক্ষা’ ও ‘প্লে-ল্যাব’, ইউপিজির ‘জলবায়ু সহনশীল কৃষি’, সেলপের ‘স্বপ্নসারথি’, সোশ্যাল ইনোভেশন ল্যাবের ‘মনের যত্ন’ এবং বিএলবিসির ‘সেবা’।
ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল প্রদর্শন করে ‘মেসেজ অব হোপ’ ভিডিও। এ ছাড়া ‘অলওয়েজ আ ওয়ে—দ্য হিউম্যান লাইব্রেরি’ পর্বে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ব্র্যাক ইয়ং প্রফেশনাল প্রোগ্রাম এবং আমরা নতুন নেটওয়ার্ক সদস্যরা তাঁদের জীবন ও অভিজ্ঞতার গল্প তুলে ধরেন।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ফিল্ম ক্লাব দেশি ও আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। আর্ট অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাবের উদ্যোগে স্থাপিত গ্রাফিতি ওয়ালে শিক্ষার্থীরা রং দিয়ে তাঁদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।