গতকাল প্রথমবারের মতো মেলায় এসেছিলেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম আলোকে জানালেন, মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে আশা করেছিলেন। কাগজের কারণে এবার বইয়ের দাম বাড়ায় পাঠকের জন্য কিছুটা চাপ তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি।

তবে এসব হিসাব এলোমেলো হয়ে গেল আজিমপুর থেকে আসা পাঠক সরদার রবিউল করিমের সঙ্গে কথা বলে। প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই পাঠক। বিজ্ঞাপন দেখে বই কিনতে এসেছেন। প্রবেশের সময় শখ করে মুখে ১২০ টাকা দিয়ে আলপনা আঁকিয়েছেন। হাতেও আঁকা আছে ২১ লেখা আলপনা। রবিউল জানালেন, টাকা জমিয়ে বই কিনতে হয় তাঁকে।

শিশু চত্বরে হতাশ হলেও শিশু-কিশোরেরা অন্যান্য দোকান থেকে পেয়েছে তাদের পছন্দের বই। প্রথমায় এসে আব্দুল কাইয়ুমের লেখা বিজ্ঞানের কী ও কেন বইটি খুঁজল এক ছাত্র। আর কবিতাপ্রেমী এক নারী এলেন বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পরানের গহিন ভিতর খুঁজতে। কথা প্রকাশের ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী জানালেন, আহসান হাবীবের টিউশন মাস্টার গল্পের বইটা বেশ কয়েক কপি বিক্রি করেছেন। তখন ঝুমঝুমি প্রকাশন থেকে এবার আসা নির্মলেন্দু গুণের নতুন কবিতার বই সূর্যটা হেলে পড়েছের জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন পাঠক।

সূর্যের ততক্ষণে গত হওয়ার উপক্রম। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে জ্বলে উঠল বাতি। এই চত্বরের আলোর ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ ছিল। গতকাল কয়েকবার পানি ছিটানোয় ধুলাও কম উড়েছে। তবে সার্বিক ঘটনা কিছুটা উল্টো। মেলার মাঠে আলোচনা ছিল নিয়ম লঙ্ঘন করে বই বিক্রির প্রসঙ্গটি। অনিয়মের খবর পেয়ে সতর্ক করা হয়েছে কয়েকটি প্রকাশনীকে। মেলা উপলক্ষে গঠন করা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অসীম কুমার দে প্রথম আলোকে জানালেন, পাইরেটেড বই বিক্রি ও পরিবেশক না হয়েও অন্য প্রকাশনীর বই বিক্রি করছিল কয়েকটি প্রকাশনী। তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মেলা পরিচালনা কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এত কিছুর মধ্যেও কয়েকজন হাসিখুশি মানুষ, যাঁরা ছিলেন বইমেলার প্রাণ। ফেরার পথে ৬ নম্বর প্যাভিলিয়ন অতিক্রমের সময় দেখা গেল তখনো দাঁড়িয়ে বই দেখছেন আজিমপুরের সেই রবিউল করিম। তিনি বললেন, ‘ভূমিকম্পে এত মানুষের প্রাণ হারানোর খবরটা মন থেকে মুছতে পারছি না। মন ভালো করতেই এই বই কিনতে আসা। বই কিনলে মন ভালো হয়।’