টেকসই উন্নয়নে তরুণদের কাজে লাগাতে টিআইবির ৯ দফা সুপারিশ

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

দেশের জনসংখ্যার এক–পঞ্চমাংশ তরুণ ও যুব। সম্ভাবনা থাকলেও বিপুলসংখ্যক তরুণ–যুবক বেকারত্বের সমস্যায় ভুগছে। দেশের অগ্রযাত্রায় সম্ভাবনাময় তরুণ–যুবকদের কাজে লাগাতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। তাঁদের দক্ষতা বাড়ানো। তাঁদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টেকসই উন্নয়ন, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ নির্মাণে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত জনশুমারি বিবেচনায় নিলে, তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীর হাত ধরে দারুণ এক জনমিতিক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। যদিও সেই সম্ভাবনার পুরোটাই নির্ভর করছে এই বিপুল তারুণ্যকে কতটা কার্যকরভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে ও তাঁদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যাচ্ছে তার ওপর। এ বিষয়ে এখনো কোনো সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যা সত্যিই হতাশার। যদিও দেশের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘দেশে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিত ব্যক্তি বেকারত্বে ভুগছে। এর বড় কারণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা যাচ্ছে না। এ সমস্যা ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠলেও তা সমাধানে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি, যা সত্যিই উদ্বেগের। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়, দেশের যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের প্রকৃত সংখ্যাকে অস্বীকার করা বা প্রকাশ না করার প্রচেষ্টা। এ প্রবণতা থেকে বের হয়ে এসে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু ও যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও বাজেট বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি।’

সম্ভাবনাময় তরুণ–যুব জনগোষ্ঠীকে জাতীয় অর্জনের মূল চালিকা শক্তি বিবেচনা করে টেকসই উন্নয়ন, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ নির্মাণে তরুণদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে ৯ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি। সুপারিশে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ–যুব জনগোষ্ঠীকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তুলতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া বলা হয়েছে, আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী, আদিবাসী ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত থেকে তরুণেরা কর্মহীন হয়েছে, সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেছে টিআইবি। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি যেসব চাকরির নিয়োগ, পরীক্ষা, যাচাই বন্ধ রয়েছে, অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থায় সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়োগপ্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

টিআইবির ৯ দফায় আরও রয়েছে, মহামারির কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। তরুণ সমাজসহ সব নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আইন ও নীতিকাঠামোর প্রয়োজনীয় আমূল সংস্কার করতে হবে।