ভুয়া পরোয়ানায় ৬৮ দিন কারাবাস, ৩২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেলেন আওলাদ

আওলাদ হোসেন
ফাইল ছবি

‘ভবিষ্যতে ভুয়া পরোয়ানার চক্করে যাতে আর কাউকে কারাগার ও আদালতে ঘুরতে না হয়। কারণ, ভুয়া পরোয়ানার চক্করের হয়রানি, যন্ত্রণা ও কষ্ট যে কী বলে বোঝাবার মতো নয়। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ।’—কথাগুলো বলছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মো. আওলাদ হোসেন।

ভুয়া পরোয়ানার চক্করে আওলাদকে ৬৮ দিন হাজতবাস করতে হয়। বিবাদীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩২ লাখ টাকা পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন আওলাদ।

ভুয়া পরোয়ানা দিয়ে আওলাদকে ৬৮ দিন ‘বেআইনি আটক’ রাখায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে তাঁর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করেন। এর শুনানি নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। বেআইনিভাবে আটক রাখায় আওলাদ হোসেনকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।

আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, এরপর আবেদনকারী ও বিবাদী পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। সমঝোতা অনুসারে আওলাদ হোসেনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩২ লাখ টাকা দেওয়া হলে মামলা (সম্পূরক আবেদন) প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা রয়েছে। পরে বিবাদীরা ৩২ লাখ টাকার চেক দেন। সমঝোতার বিষয়টি হলফনামা আকারে হাইকোর্টকে অবহিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে রুল খারিজ (ডিসচার্জ ফর নন প্রসিকিউশন) করে দিয়েছেন।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, কক্সবাজারে হওয়া নারী ও শিশু নির্যাতনের এক মামলায় ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর আওলাদকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একের পর এক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে এবং এক আদালত থেকে অন্য আদালতে তাঁকে হাজির করা হয়। এমন অভিযোগ তুলে আওলাদকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি—তা নিশ্চিতে তাঁকে হাইকোর্টে হাজির করতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রিট করেন তাঁর স্ত্রী। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আওলাদকে ‘ভুয়া ওয়ারেন্টে’ জড়ানোর অভিযোগ অনুসন্ধান করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আটকের ৬৮ দিন পর হাইকোর্টের আদেশে ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। এরপর ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সম্পূরক ওই আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী।

ভুয়া পরোয়ানা দিয়ে বেআইনিভাবে কাউকে আটক রাখায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম বলে জানান আওলাদের অন্যতম আইনজীবী এমাদুল হক বসির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতিবেদনে ১০ জন ব্যক্তির নাম এসেছে। প্রতিবেদনে আসা ব্যক্তিদের বিবাদী করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ওই সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। ৩২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পর এই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে মূল রিটটি বিচারাধীন।

আরও পড়ুন

আশুলিয়ার মির্জানগর এলাকার টাকসুরে বসবাস করেন মো. আওলাদ হোসেন। তিনি আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ১০ বিবাদীর পক্ষে একজন ব্যক্তি সমন্বয় করে ৩২ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন। গতকাল সোমবার বিকেলে চেকটি হাতে পেয়েছেন তিনি।