এ দক্ষতা তিনি কোথায় কাজে লাগাবেন
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অবসরে যাচ্ছেন। এর আগের মাসে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে তিনি সর্বোচ্চ ২০টি কর্মদিবস পাবেন। এত স্বল্প সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর এই প্রশিক্ষণ রাষ্ট্রের কী কাজে লাগবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে গত রোববার একটি চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ৯ কর্মকর্তা আগামী ৪ থেকে ৮ মার্চ অথবা কাছাকাছি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। এই সময়ের মধ্যে আসা-যাওয়ার সময় অন্তর্ভুক্ত নয়। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় স্বাস্থ্য খাতে নিরাপদ পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ‘ওয়াশ ইন হেলথ কেয়ার ফ্যাসিলিটিজ ফর সিনিয়র অফিশিয়ালস’ শীর্ষক সক্ষমতা বাড়ানোর কোর্সে অংশ নেবেন।
সেখান থেকে ফিরে তিনি সর্বোচ্চ ২০টি কর্মদিবস পাবেন। এত স্বল্প সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর এই প্রশিক্ষণ রাষ্ট্রের কী কাজে লাগবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মার্কিন দূতাবাসে দেওয়া চিঠির তথ্য অনুযায়ী, সফরকারী দলে আরও রয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মলয় চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক শাহিদা সুলতানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ। বাকিরা সংস্থাটির নির্বাহী ও সহকারী প্রকৌশলী।
অবসরে যাওয়ার আগে এ ধরনের প্রশিক্ষণে যাওয়া নৈতিকভাবে ঠিক নয়; বরং আরও দীর্ঘ সময় কাজ করবেন, এমন কোনো কর্মকর্তাকে পাঠালে জনস্বার্থ রক্ষা হতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবিষ্যতে হাসপাতাল, ক্লিনিকের মতো মেডিকেল স্থাপনাগুলোতে পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতার (ওয়াশ) বিষয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করছে। স্বাস্থ্য খাতে ‘ওয়াশ’ বিষয়ে এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগবে। তবে অবসরে যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগে প্রধান প্রকৌশলীর এই প্রশিক্ষণে যাওয়ার বিষয়টি বোধগম্য নয়।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের বিষয়ে একাধিক পরিপত্র জারি করেছে সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সীমিত আকারে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীদের আমন্ত্রণে ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে বৈদেশিক প্রশিক্ষণেও অংশ নেওয়া যাবে।
এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এমন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ দীর্ঘদিন ধরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মেডিকেল স্থাপনাগুলোতে ওয়াশ বিষয়ে কাজ করবে। এ জন্য ইউনিসেফের পক্ষ থেকে কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে এ সফরের আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী ৭ এপ্রিল তাঁর বয়স হবে ৫৯ বছর। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স ৫৯ বছর। সে হিসেবে আগামী ৭ এপ্রিল তাঁর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ শাখার অধীন একটি সংস্থা। সফরকারী দলে আছেন এই শাখার অতিরিক্ত সচিব মলয় চৌধুরী। অবসরে যাওয়ার আগে প্রধান প্রকৌশলীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (সরোয়ার হোসেন) তো প্রমোদভ্রমণে যাচ্ছেন না। তাঁর অর্জিত অভিজ্ঞতা তো অকার্যকর হয়ে যাবে না। এই অভিজ্ঞতা পরে কাজে লাগবে না, এমনটাও নয়। অবসরে যাওয়ার পরও তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ আছে।
মো. সরোয়ার হোসেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি। মার্কিন দূতাবাসে দেওয়া চিঠির তথ্য অনুযায়ী, তাঁর জন্ম ১৯৬৫ সালের ৭ এপ্রিল। আগামী ৭ এপ্রিল তাঁর বয়স হবে ৫৯ বছর। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স ৫৯ বছর। সে হিসেবে আগামী ৭ এপ্রিল তাঁর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা।
এ প্রসঙ্গে মো. সরোয়ার হোসেনের সঙ্গে সোমবার দুপুরে তাঁর দপ্তরে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘২১ দিনে একজন প্রধান প্রকৌশলী অনেক কিছু করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেই আলোচনা করা, বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। সরকারি অর্থায়নে এই সফর হলে আমি নিজেই যেতাম না। ইউনিসেফ নিয়ে যাচ্ছে।’
সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে নানা সময়েই প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে ২০২২ সালের ২২ মে অবসরে যান স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। অবসরে যাওয়ার ঠিক আগের দিন সরকারি খরচে তিনি নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে শিক্ষাসফর শেষে দেশে ফেরেন। সরকারি তিনটি প্রকল্পের তহবিল থেকে তাঁর ১০ দিনের সফরের পুরো খরচ দেওয়া হয়েছিল।
অবসরের ঠিক আগে সরকারি কর্মকর্তাদের শিক্ষাসফরকে অর্থের অপচয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি চাকরির বিধিবিধানের বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, অবসরে যাওয়ার আগে এ ধরনের প্রশিক্ষণে যাওয়া নৈতিকভাবে ঠিক নয়; বরং আরও দীর্ঘ সময় কাজ করবেন, এমন কোনো কর্মকর্তাকে পাঠালে জনস্বার্থ রক্ষা হতো।
২১ দিনে একজন প্রধান প্রকৌশলী অনেক কিছু করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেই আলোচনা করা, বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। সরকারি অর্থায়নে এই সফর হলে আমি নিজেই যেতাম না। ইউনিসেফ নিয়ে যাচ্ছে।মো. সরোয়ার হোসেন