জাতীয় সংকটে পথ দেখাতেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানফাইল ছবি

চিন্তাকে প্রসারিত করে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়ে গিয়েছেন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। দেশের যেকোনো সংকটে পথ দেখিয়েছেন তিনি। এখন তিনি না থাকলেও তাঁর আদর্শ বহন করে যাবে তরুণ প্রজন্ম।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চতুর্থ প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় উঠে এল এসব কথা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেঙ্গল শিল্পালয়ে এ আয়োজন করা হয়।

সভায় ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সংস্কৃতির বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হলে খুব ব্যথিত হতেন আনিসুজ্জামান স্যার। তিনি লেখালেখির মাধ্যমে তরুণদের জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করতেন। তিনি চেয়েছিলেন সমাজে সবাই শিক্ষিত, আত্মবিশ্বাসী ও আত্মোপলব্ধিতে সচেতন হবে। সে সমাজটি আমরা এখনো নির্মাণ করতে পারিনি; বরং আরও পিছিয়ে পড়ছি।’

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আনিসুজ্জামান স্যার আমাদের শিখিয়েছিলেন চিন্তাটা বড় করতে হবে, আকাঙ্ক্ষাটা বড় করতে হবে। তিনি নেই বটে, তবে সব সময় আমরা তাঁর সেই প্রেরণা অনুভব করতে পারি। আশার ব্যাপার, তরুণদের মধ্যে এখনো আনিসুজ্জামান আছেন।’

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে স্মরণ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

শিক্ষাবিদ, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম বলেন, শ্রেণিকক্ষের বাইরে এত কিছুর সঙ্গে আনিসুজ্জামান স্যার যুক্ত ছিলেন বলেই জাতীয় যেকোনো সংকটে তিনি পথ দেখাতে পারতেন। নতুন প্রজন্মকে মানবিকভাবে তৈরি করার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তাঁর।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে আনিসুজ্জামান ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন উল্লেখ করে মাহফুজা খানম বলেন, পরবর্তী সময়ে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হননি ঠিকই, কিন্তু তাঁর কাজের পরিমণ্ডলই ছিল সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে। ৬৯–এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতে আনিসুজ্জামান স্যারের অবদান রয়েছে। এ সময় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের পরিবারের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের ঘনিষ্ঠতার স্মৃতিচারণা করেন তিনি।

আরও পড়ুন
স্মরণসভায় আসা অতিথিবৃন্দ
ছবি: প্রথম আলো

কবি, প্রাবন্ধিক পিয়াস মজিদ বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ৮৩ বছরের কর্মমুখর জীবনের প্রথম জীবনেই কলকাতার পার্ক সার্কাসে পাঠাগার তৈরি করছেন বন্ধুদের নিয়ে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন ও সংবিধান থেকে বিচ্যুতিতে প্রতিবাদ সব দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। আনিসুজ্জামান দেশের প্রতি কখনো নিজের প্রতিজ্ঞার কথা ভোলেননি। তাই সম্পাদনা হোক অথবা নিজের মৌলিক লেখা—সবকিছুতেই ছিল তাঁর সেই আন্তরিকতার ছাপ। তাঁর আত্মজীবনীর খণ্ডগুলোতে তিনি অকপটভাবে নিজেকে তুলে ধরেছেন উল্লেখ করে পিয়াস মজিদ বলেন, সত্য ভাষণের প্রতি সব সময় দায়বোধ অনুভব করতেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

স্মরণসভা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আনিসুজ্জামান স্যারের কাছে গেলে যেকোনো মানুষই অনুভব করতে পারতেন সে নিজে বিশেষ। এটি প্রজন্মের গুণের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগুণও বটে। আনিসুজ্জামানের প্রয়াণের পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কালি ও কলমের তৎকালীন সম্পাদক আবুল হাসনাত স্মরণ সংখ্যা করেছিলেন। তখন কেউ ভাবতে পারেননি এর কিছুদিনের মধ্যে তাঁর জন্যও আমাদের স্মরণ সংখ্যা তৈরি করতে হবে। করোনা আমাদের অনেক গুণীজনকে কেড়ে নিয়েছে।’

২০২০ সালের ১৪ মে ৮৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক ছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় তিনি মৌলিক অবদান রেখেছেন। শেষ জীবনে তিনি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক।

আরও পড়ুন