চট্টগ্রাম আদালত: বিচারকশূন্যতায় থেমে আছে দুর্নীতির মামলার বিচার

  • ২১ মার্চ বিচারক বদলি হন।

  • এখন বিচারকশূন্য আদালত।

চট্টগ্রাম জেলার মানচিত্র

আড়াই মাস ধরে বিচারকশূন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। এ কারণে দুর্নীতির মামলাগুলোর বিচার থেমে আছে। সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, এর ফলে শাস্তির আওতায় না আসায় উৎসাহিত হচ্ছেন দুর্নীতিবাজেরা।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার দুর্নীতির মামলার বিচারের জন্য একমাত্র আদালত চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। গত ২১ মার্চ এই আদালতের বিচারক মুনসী আবদুল মজিদ কক্সবাজারে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি হন। এর পর থেকে বিচারকশূন্য আদালতটি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা, কক্সবাজারের উখিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, কক্সবাজারের আনিসুর রহমান ইয়াহিয়া, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবু আহমেদসহ বন্দর, কাস্টমস, ভূমি অফিসসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা বিচারাধীন এ আদালতে।

বিচারক বদলি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিচারকের যোগদান নিশ্চিত করতে পারলে বিচারপ্রক্রিয়ায় একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে। দুর্নীতিবাজেরা সুযোগ পাবে না।
আখতার কবির চৌধুরী, সম্পাদক, সুজন, চট্টগ্রাম

বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৬০৪ মামলা। এর মধ্যে দুর্নীতির মামলা ৩২৬টি। বাকিগুলো হত্যা, মাদক ও অস্ত্র আইনের।

এই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কাজী সানোয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আড়াই মাস ধরে বিচারকশূন্য থাকায় বিচারকাজ থেমে আছে। রেলওয়ের সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধাসহ কয়েকজনের দুর্নীতির মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো আর এগোনো যাচ্ছে না। দ্রুত বিচারকের শূন্য পদ পূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, রেলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক জিএম ইউসুফ আলী মৃধাসহ তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে তিনটি মামলার রায় হয়। বাকি ১০টি মামলা এই আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে চারটি মামলা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিচারকশূন্য হওয়ায় এগুলোর বিচার শেষ করা যাচ্ছে না।

টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে দুদকের করা ৪৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৪ টাকার তথ্য গোপন এবং ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলা, তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত টেকনাফ উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জাফর আহমদের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের মামলা বিচারাধীন এখানে।

পাঁচ জেলার দুর্নীতির মামলার বিচারের জন্য একমাত্র আদালত চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। বিচারাধীন মামলা ৬০৪।

গত মাসে এই মামলায় দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, জাফর আহমদ জনপ্রতিনিধি থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন। এবার নির্বাচিত হওয়ার আগে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনার নামে ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরফরাজ খান চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলাটির বিচারকাজও থমকে আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিলম্বিত বিচারের কারণে দুর্নীতিবাজেরা আরও বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে না। বিচারকশূন্যতার বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। বিচারক বদলি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিচারকের যোগদান নিশ্চিত করতে পারলে বিচারপ্রক্রিয়ায় একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে। দুর্নীতিবাজেরা সুযোগ পাবে না।