পুলিশ আক্রান্ত হলেও কি নিজেকে রক্ষার অধিকার থাকবে না, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির কর্মসূচি যেখানে শান্তিপূর্ণ হচ্ছে, সেখানে কেউ কিছু বলছে না। বিএনপির কথায় মনে হয়, তারা বোমা ছুড়বে, লাঠি মারবে, ঢিল ছুড়বে, গুলি করবে—তাদের কিছু বলা যাবে না। তিনি প্রশ্ন রাখেন, পুলিশ আক্রান্ত হলেও কি নিজেকে রক্ষা করার অধিকার থাকবে না?

বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এদিনই পাঁচ কর্মদিবসের এই অধিবেশন শেষ হয়।

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার এক বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু বিএনপির নেতা–কর্মীরা মাঠে নেমেই আগে কোথায়, কাকে, কীভাবে আক্রমণ করবে, কীভাবে একটা ‘সিচুয়েশন’ তৈরি করবে, সে চেষ্টায় থাকে। এটা না করলে গণমাধ্যমে কাভারেজ পাবে না। মিডিয়াতে কাভারেজ পাওয়ার জন্যই তারা এমন ঘটনা ঘটাবে।

এর আগে রুমিন ফারহানা অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু পুলিশের আচরণ অন্য রকম।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রুমিন ফারহানা ভোলার একটি ঘটনা নিয়ে খুবই চিৎকার চেঁচামেচি করে অনেক প্রতিবাদ করে গেছে। বিরোধী দল আন্দোলন করবে। হ্যাঁ, আমি বলেছি, কিছু না বলার জন্য। এটা ঠিক। কিন্তু পুলিশ তো আগবাড়িয়ে কিছু বলেনি।

পুলিশ বাদ দেন, একটা মানুষ যদি আক্রান্ত হয়, তার নিজেকে বাঁচানোর অধিকার আছে। সেটা কি নেই? না পুলিশ আক্রান্ত হলেও নিজেকে রক্ষা করার কোনো অধিকার থাকবে না?’

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো আন্দোলন করার কথা বলছি। বলেছি মিছিল করেন, আন্দোলন করেন শান্তিপূর্ণ, কেউ কিছু বলবে না। যেখানে শান্তিপূর্ণ হচ্ছে, সেখানে তো কেউ কিছু বলছে না।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, কিছু মিডিয়া ও বিরোধী দল এমন একটা হতাশা ছড়ায়, যেন সব শেষ হয়ে গেল। নিজেরা কিন্তু ভালোই আছেন। হতাশাব্যঞ্জক কথা ছড়িয়ে মানুষদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা মোটেই সমীচীন নয়।

বক্তব্যের একপর্যায়ে জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে বড় পর্দায় জিয়াউর রহমানের সময়ে সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসি, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সারা দেশে জঙ্গি কার্যক্রম ও বিরোধী দলের ওপর হামলা–নির্যাতন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, এতটুকু মানুষ্যত্ব যাদের মধ্যে আছে, তারা কী করে বিএনপিকে সমর্থন জানায়, তাদের সঙ্গে হাত মেলায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবার হাতে নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কারও প্রতি প্রতিশোধ নিতে যায়নি।

পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ নির্বাচন কমিশনকে জাদুর বাক্স উল্লেখ করেছিলেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাদুর বাক্স দেখিয়েছে বিএনপি। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ৪০ দিন পর্যন্ত টেলিভিশনে দেখানো হয়েছিল জিয়া অত্যন্ত সৎ ছিল। জিয়ার প্যান্ট কেটে কোকো, তারেকের প্যান্ট বানিয়ে পরানো হতো। খালেদা জিয়া কোনোমতে রেশনের টাকা জোগাড় করে চলত। জিয়াউর রহমানের ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছু ছিল না। এরপর দেখা গেল, খালেদা জিয়ার গায়ে উঠল ফ্রেঞ্চ শিপন, যা বিদেশে ছাড়া পাওয়া যায় না। এক লাখ টাকা একটা শাড়ির দাম হয়। কোকো–তারেক সেই ভাঙা বাক্স জাদুর বাক্স হয়ে গেল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচন করল না, ২০১৮ সালে ৩০০ আসনে ৭০০ প্রার্থী দিয়েছে। এক প্রার্থী আসে লন্ডন থেকে, আরেক প্রার্থী আসে গুলশান অফিস থেকে। এক প্রার্থী আসে পুরানা পল্টন থেকে। রিজভী সাহেব একটা দেন তো ফখরুল সাহেব একটা দেন—সব নাকচ হয়ে যায় লন্ডন থেকে। তারা তো মনোনয়ন বিক্রি করেছে। কে কত টাকা দিতে পারে, সেটা নিলাম ছিল। যে টাকা দেবে, সে–ই নির্বাচন করবে। উনারা নির্বাচনব্যবস্থাকে বললেন জাদুর বাক্স।

তারেক রহমান কীভাবে লন্ডনে থাকেন—প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে তাদের জন্য কত টাকা যাচ্ছে, সেটাই খুঁজে বের করা দরকার। কত টাকা এভাবে বাইরে যাচ্ছে, পাচার হচ্ছে, সেটাও তদন্ত হওয়া দরকার।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছে। এই যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়েছে। তারপরও সরকার অর্থনীতি ধরে রাখতে পেরেছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ খাদ্যঝুঁকিতে নেই। আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশ কোনো সংকটের মধ্যে নেই।