ঢাকায় পর্দা উঠল ‘টেকনো স্পার্ক ২০ সিরিজ’ মিউজিক ফেস্টের

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় পর্দা উঠল ‘টেকনো স্পার্ক ২০ সিরিজ’ মিউজিক ফেস্টেরছবি: সংগৃহীত

ছন্দময় বিটের প্রতিধ্বনিতে জাদুর শহর ঢাকায় পর্দা উঠল ‘টেকনো স্পার্ক ২০ সিরিজ’ মিউজিক ফেস্টের। নিয়ন আলোয় ভেসে বেড়ানো ঢাকার বাতাসকে এই মিউজিক্যাল সন্ধ্যায় আলোড়িত করে তোলে সংগীতের মাধুর্য ও শ্রোতার উচ্ছ্বাস।

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি, এক্সপো জোন) অনুষ্ঠিত এই উৎসবটি শুধু সংগীত ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের মিলনমেলায়ই পরিণত হয়নি, বরং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও শৈল্পিক ভ্রাতৃত্বের একটি মাধ্যম হিসেবেও কাজ করেছে।

এই চাকচিক্যময় সন্ধ্যার শিরোনাম ছিলেন ভারতীয় প্রখ্যাত মিউজিশিয়ান বাদশাহ। জমজমাট মিউজিক এবং মঞ্চে সক্রিয় উপস্থিতির জন্য বিখ্যাত বাদশাহ তাঁর পারফরম্যান্সের মাধ্যমে মাতিয়ে তোলেন টেকনো ফেস্টের মঞ্চ; যা হাজার হাজার সংগীতপ্রেমী হৃদয়কে বিমোহিত করে তোলে, যাঁরা দূরদূরান্ত থেকে জড়ো হয়েছিলেন শুধু এই সংগীতযজ্ঞের সাক্ষী হতে।

ভাষাগত সীমানা ছাড়িয়ে বাদশাহর আইকনিক ডেবিউ জিঙ্গেল ‘ডিজে ওয়ালে বাবু’ থেকে ‘বড়লোকের বেটি লো’-এর আলোড়নকারী মিউজিকের তালে যেন মেতে উঠেছিল পুরো এলাকা।

মিউজিক্যাল ট্যাপেস্ট্রিতে অনন্য স্বাদ যোগ করা অসংখ্য প্রতিভাবান শিল্পীর এক মিলনমেলা ছিল এই সন্ধ্যা। তাশফী, তাসনিম আনিকার ফিচারিংয়ের সঙ্গে ফুয়াদ অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের প্রাণবন্ত পরিবেশনা, আলোড়ন তোলা সঞ্জয়ের বিটসহ প্রতিটি পারফরম্যান্স ছিল বাংলার মিউজিক্যাল সমৃদ্ধি এবং বৈচিত্র্যের প্রমাণ।

কণ্ঠশিল্পী জেফারের জাদুকরী ‘ঝুমকা’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দর্শকেরা হয়ে ওঠেন মন্ত্রমুগ্ধ। দুই ভাই প্রীতম হাসান এবং প্রতীক হাসান তাঁদের জনপ্রিয় একক সংগীত ‘খোকা’ এবং ‘দেওরা’র মাধ্যমে দর্শকদের দিয়ে যান ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা জাগিয়ে ব্ল্যাক জ্যাং মঞ্চ কাঁপিয়ে তোলেন তাঁর সিগনেচার স্টাইলের মাধ্যমে।

মিউজিক ফেস্টটিতে নেতৃস্থানীয় মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেকনো উন্মোচন করে তাদের সর্বশেষ সংযোজন স্পার্ক ২০ প্রো+ফোন। টেকনো এক্সপেরিয়েন্স জোনে মিউজিক এবং টেকনোলজির ফিউশন এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছায়; সেখানে অংশগ্রহণকারীরা লেটেস্ট টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো+এর উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছে। এর যুগান্তকারী ১০৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং অত্যাধুনিক এআই প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো+ মোবাইল ফটোগ্রাফির সীমানাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে।

বাদশাহর পারফরম্যান্সের সময় রাতের আকাশকে আলোড়িত করে হাজারো আতশবাজির প্রদর্শন। সংগীতের জাদুকরি বিটের সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মিউজিক্যাল এক্সপেরিয়েন্সের এক অনন্য উচ্চতায়। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিওগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যা শব্দের মাত্রার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় যেন দর্শকদের উচ্চ স্বরে মেতে ওঠা উল্লাস, মিউজিক্যাল বিট এবং উত্তেজনার সঙ্গে তা মিলে একীভূত হয়ে যায়।

ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংগীত-ঐতিহ্যের প্রশংসা করেন বাদশাহ। বাংলা ভাষার প্রতি নিজের ভালোবাসা এবং দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা জানান তিনি।

ঢাকার শ্রোতাদের উদ্দীপনাকে প্রতিফলিত করে বাদশাহ মন্তব্য করেন, ‘এমন সাড়া পেয়ে আমি আনন্দিত এবং পারফর্ম করার সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞ। দর্শকদের মধ্যে এক উন্মাদনাময় শক্তি ছিল। ঢাকা মোটেও হতাশ করেনি। আমি আবার আসতে চাই।’
বাংলাদেশি শিল্পীদের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে বাদশাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্পীরা অত্যন্ত প্রতিভাবান এবং সৃজনশীল। আমি ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের প্রতিভাবান শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই।’

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় ‘টেকনো স্পার্ক ২০ সিরিজ’ মিউজিক ফেস্টের আয়োজন
ছবি: সংগৃহীত

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার এবং আন্তসাংস্কৃতিক কোলাবোরেশনের প্রচারে বাদশাহর যে অবিরাম প্রচেষ্টা, তা বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর অনুরাগের ফলে আরও বেশি জোরদার হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন বাদশাহ। তাঁর বাংলা ট্র্যাক ‘বড়লোকের বেটি লো’ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বাদশাহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংগীত ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন বলেন, ‘অবশ্যই আমার সংগীত সব সময়ই বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানকে ঘিরেই থাকে।’

সাক্ষাৎকারটিতে ভারতের হিপ-হপ মিউজিকের বিবর্তন এবং বৈশ্বিক মঞ্চে এর ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে। ভারতে হিপ-হপ শিল্পীদের স্বাধীন শৈল্পিক বিচরণ এবং সৃজনশীল স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'হিপ-হপের ওপর নির্ভর করে স্বাধীন একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে এবং এর বেঁচে থাকার জন্য অন্য কোনো শিল্পের ওপরও হিপ-হপ নির্ভরশীল নয়।’

রাতের গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের উচ্ছ্বাস আর করতালির প্রতিধ্বনি ম্লান হতে থাকে। অবিস্মরণীয় এক স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে ঘরে ফেরেন হাজারো শ্রোতা-দর্শক।

যাঁরা এগিয়ে থাকার কথা চিন্তা করেন, তাঁদের জন্য ‘কিছুতেই থামব না’ ব্র্যান্ড থিম দ্বারা পরিচালিত টেকনো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উপস্থাপন করতে সব সময়ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্লিক এবং ইন্টেলিজেন্ট প্রোডাক্টগুলোর বিকাশের মাধ্যমে টেকনো বিশ্বব্যাপী মানুষদের, তাঁদের নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে এবং ভবিষ্যতের জন্য অবিরাম চেষ্টা করতে উৎসাহিত করে।