ঘরে ঘরে বিষাক্ত বাতাস: মুক্তির উপায় কী

ইনডোর পলিউশনের কার্যকর ও নিরাপদ সমাধান হিসেবে প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঘরে একটি ভালো মানের এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেনছবি: প্রথম আলো

ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে পা ফেললেই গাড়ির ধোঁয়া, ধুলাবালু, যেখানে-সেখানে ফেলা ময়লা-আবর্জনার কারণে দূষিত বাতাস—যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। এই বিষাক্ত বাতাস ফুসফুসে নিয়েই আমাদের প্রতিদিনের ছুটে চলা। এই বিষাক্ততা থেকে মুক্তি কোথায়? নিজের ঘর? ঘরকেই তো আমরা সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ধরে নিই। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে ঘরে ও বাইরে বায়ুদূষণের কারণে বছরে প্রায় ১ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাইরের বায়ুদূষণের পাশাপাশি ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, বাইরের বাতাসের তুলনায় ঘরের বাতাস ২ থেকে ৫ গুণ বেশি দূষিত হতে পারে। এই ‘বিষাক্ত বাতাস’ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক আরেকটি প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০ লাখ মানুষ প্রতিবছর অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের কারণে অকালমৃত্যুর শিকার হচ্ছেন, যার মধ্যে প্রায় ২ লাখ হলো ৫ বছরের কম বয়সী শিশু। এর মধ্যে ৩২ শতাংশ হৃদরোগ, ২১ শতাংশ শ্বাসনালির সংক্রমণ, ২৩ শতাংশ স্ট্রোক এবং ১৯ শতাংশ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

ঘরের ভেতরের বাতাসের মান খারাপ হওয়ার কারণগুলো কী এবং এ থেকে মুক্তির উপায়ই-বা কী? জানা যাক—

অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের কারণ

ইনডোর পলিউশন অনেকটাই অদৃশ্য শত্রুর মতো, চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এর ক্ষতি অনেক গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি। ইনডোর পলিউশনের মূল কারণগুলোর মধ্যে আছে ধুলাবালু, অতি সূক্ষ্ম কণিকা ‘পিএম২.৫’ এবং কিছু অদৃশ্য রাসায়নিক পদার্থ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস—যা ঘরের রং, পারফিউম, ক্লিনার, নতুন আসবাব বা গ্লু থেকেও নির্গত হয়। এ ছাড়া ‘ফরমালডিহাইড’ নামের একধরনের গ্যাসও বাতাস দূষিত করে, যা সাধারণত নতুন কাঠ বা রং থেকে বের হয়। তা ছাড়া রান্নার ধোঁয়া, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং পোষা প্রাণীর লোম—এসবও ঘরের ভেতরের বাতাসের মান নষ্ট করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং বায়ুদূষণ গবেষক ড. আব্দুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন বাইরের বাতাসের পাশাপাশি ঘরের বাতাসের মানও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু আমরা বাইরের দূষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য সব সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখি। এটি মোটেও ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, বাসায় সঠিক ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। তবে ঘরে একটি এয়ার পিউরিফায়ার থাকলে ভালো। এতে ঘরের ভেতরের বাতাসের মান সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়।

ঘরের বাতাসের মান ভালো রাখতে করণীয়

ভেন্টিলেশন: দিনভর জানালা-দরজা বন্ধ থাকলে বাসার ভেতরে বাতাসের স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে ধুলাবালু, ধোঁয়া ও বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান আবদ্ধ হয়ে থাকে ঘরের ভেতরেই। তাই প্রাথমিকভাবে ইনডোর পলিউশনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে সঠিক ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। সে ক্ষেত্রে সব সময় জানালা বন্ধ রাখা যাবে না এবং প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে বাতাসের মান অনেকটাই বেড়ে যায়।

ইনডোর প্ল্যান্ট: ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর রাখতে কিছু সহজ উপায় আছে। যেমন ইনডোর প্ল্যান্ট ব্যবহার করা। এর মধ্যে আছে স্নেক প্ল্যান্ট, পিস লিলি, অ্যালোভেরা ইত্যাদি গাছ। যা বাতাস থেকে ক্ষতিকর গ্যাস যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে ঘরের পরিবেশ থাকে সতেজ ও স্বাস্থ্যসম্মত।

এয়ার পিউরিফায়ার: ইনডোর পলিউশনের কার্যকর ও নিরাপদ সমাধান হিসেবে প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঘরে একটি ভালো মানের এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এটি বাতাসের মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা করতে সাহায্য করে। উন্নত মাল্টিলেয়ার ফিল্টার সিস্টেম থাকায় এগুলো বাতাস থেকে পিএম২.৫, অ্যালার্জেন, ভিওসিএস ও বিভিন্ন দুর্গন্ধ দূর করে ঘরকে রাখে পরিষ্কার ও আরামদায়ক।