ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩১৯
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসে ডেঙ্গুতে ২২ জনের মৃত্যু হলো। চলতি বছরের কোনো মাসেই এত মৃত্যু হয়নি। এ বছর এখন পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের।
আজ রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে। এতে বলা হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গু নিয়ে ৩১৯ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গু নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৭ ও উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে ৬০ জন, খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৩ জন, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৭, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ জন ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
গত জানুয়ারি থেকে আজ সকাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ২৭৮ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ নারী।
বর্ষাকালে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। চলতি বছর এখন পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম। কিন্তু প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে যে বৃষ্টি হচ্ছে, এর কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ বে–নজীর আহমেদ।
ডেঙ্গু বর্ষাকালে বেশি হলেও ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল অক্টোবর মাসে। এবারও বর্ষা মৌসুমের পর ডেঙ্গুর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মনে করেন বে–নজীর আহমদ। তিনি বলেন, জুলাই মাস থেকে চলা আন্দোলনের মধ্যে সিটি করপোরেশনগুলোর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম অনেকটাই কমে গিয়েছিল। এখন তা বাড়াতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আগস্ট মাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। তাঁদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ নারী ও ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ। এ সময় ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে।
২০০০ সালে দেশে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর পর থেকে প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল। ব্যতিক্রম ছিল ২০২০ সাল। ওই বছর করোনা মহামারি দেখা দেয়। দেশে ডেঙ্গু রোগী ছিলেন কম, সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু ছিল না। করোনা মহামারি শেষ না হতেই ২০২১ সাল থেকে আবার ডেঙ্গু বাড়তে থাকে।
করোনা মহামারি শুরুর পরের বছর ২০২১ সালে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৪২৮। এর মধ্যে মারা যান ১০৫ জন। মৃতের হার ছিল শূন্য দশমিক ৩৭। পরের বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। তাঁদের মধ্যে মারা যান ২৮১ জন। এ বছর আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বাড়ে মৃত্যুহার। ২০২২ সালে মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ৪৫।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুর সব রেকর্ড ভেঙে যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ২৭ জন। তাঁদের মধ্যে মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন। মৃত্যুহার বেড়ে হয় শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ।