এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, এ বছর এ পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১০ জনকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছে। এসব রোগী শনাক্ত হয়েছে শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, নওগাঁ, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর—এই ছয় জেলায়। আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ৬ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী। অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ।

গতকাল আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে নিয়মিতভাবে সন্দেহজনক রোগীর তথ্য আমাদের কাছে আসছে। যেমন আজ রোববার এসেছে চারজনের খবর। আমরা নমুনা পরীক্ষা করছি নিয়মিতভাবে।

নিপাহ ভাইরাস বাদুড়ের শরীরে থাকে। বলা যায়, বাদুড় এই রোগের বাহক। তবে বাদুড় এতে আক্রান্ত হয় না। বাদুড় থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে আসে। বিজ্ঞানীরা এটা জেনেছেন যে বাদুড় খেজুরের কাঁচা রস খায়, বাদুড়ের লালা বা প্রস্রাবের সঙ্গে ভাইরাস রসে যায়। সেই রস খেলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। তবে বাদুড়ের খাওয়া ফল খেলেও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে।

বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০০১ সালে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর জেলায়। এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৬ সাল ছাড়া প্রতিবছরই নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে কোনো না কোনো জেলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয় ২০০৪ সালে। ওই বছর ৬৭ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা বলছেন, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। ৭০ শতাংশের ওপরে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ৩৩৫ জনকে শনাক্ত করেছে আইইডিসিআর। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৩৭ জন, অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ।

মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসার চেয়ে এর সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। খেজুরের কাঁচা রস নিয়ে কোনো উৎসব করা বা উৎসবে খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া ঠিক হবে না।’