আলোকচিত্রে উঠে এল অবহেলিত নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেক নারী এখন আর বেঁচে নেই। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা যথাযথভাবে ইতিহাসে ওঠে আসেনি। সেই নারীদের কথা তুলে আনার প্রয়াসে আয়োজন করা হয়েছে ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি’ শিরোনামের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের কণ্ঠে ঝরল নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন না হওয়ার আক্ষেপ। তাঁদের মতে, নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ আজও শেষ হয়নি। এখনকার যুদ্ধ এই বীর যোদ্ধাদের অবদান ও স্বীকৃতি আদায়ের।
ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে তরুণ আলোকচিত্রী মাশরুক আহমেদের গবেষণানির্ভর এই প্রদর্শনী। বহুমাত্রিক এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী থেকে শুরু করে ময়মনসিংহের ময়মুনা খাতুন, সিরাজগঞ্জের রাহেলা বেগম, সুনামগঞ্জের কাঁকন বিবির মতো ৩০ জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধার আলোকচিত্র, যুদ্ধকালীন তাঁদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানের ছবি ও সাক্ষাৎকার। সাত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে এসব নারী বীর মুক্তিযোদ্ধার কথা তুলে এনেছেন আলোকচিত্রী।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকার ইতিহাস এখনো নীরবে রয়ে গেছে। সেই নীরবতা ভাঙার চেষ্টা এই প্রদর্শনী। আলোকচিত্র কীভাবে ইতিহাস তুলে ধরতে পারে, তা বোঝা যায় এমন সব কাজের মধ্য দিয়ে।
নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি না পাওয়ার ধারা এখনো একই রকম আছে বলে আক্ষেপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ।
মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্রের পাশাপাশি আরও অনেকভাবেই মানুষকে যুদ্ধ করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন কাউন্টার ফটোর প্রতিষ্ঠাতা আলোকচিত্রী সাইফুল হক (অমি)। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনতে পারা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের বড় অর্জন। এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে নারীর উপস্থিতি উঠে এসেছে এখানে।
আলোকচিত্রী মাশরুক আহমেদ এই কাজের জন্য সাত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন ঠিকানায় গিয়ে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করা এবং তাঁদের সঙ্গে কথোপকথনের নানা অধ্যায় তুলে ধরেন।
প্রদর্শনীটির কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের যে বয়ান আমরা দেখি, তা অনেক বেশি পুরুষতান্ত্রিক। সেখানে নারীদের কণ্ঠস্বর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই কাজটি গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রদর্শনীর সহযোগিতায় রয়েছে দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (ডিবিএফ)। এর প্রতিষ্ঠাতা দুর্জয় রহমান বলেন, ৫০ বছরের বেশি সময় আগের ইতিহাসকে ২০২৪-এ দাঁড়িয়ে তুলে ধরতে চাইলে সেটাকে সমকালের মতো করেই উপস্থাপন করা প্রয়োজন। এই প্রদর্শনীতে সেটা রয়েছে।
আজ শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ২৬ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে এই প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।