উপযুক্ত কারণ ও সর্বোচ্চ বিচক্ষণতা প্রয়োগ করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান প্রধান বিচারপতির

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানছবি: সংগৃহীত

সর্বোচ্চ বিচক্ষণতা প্রয়োগ করে উপযুক্ত কারণে আদালতে জনস্বার্থ মামলা (পিআইএল) পরিচালনা করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে আজ সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি এ আহ্বান জানান।

সমসাময়িক আইন শাস্ত্রে ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ বহুল প্রচলিত একটি অভিধা বলে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, এই সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো পিআইএল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা সর্বোচ্চ বিচক্ষণতা প্রয়োগ করে উপযুক্ত কারণে আদালতে পিআইএল করবেন। কিছুতেই যেন এমনটি না হয় যে নিছক পত্রিকায় নিজের নাম ছাপানোর জন্য কিংবা টিভি চ্যানেলে নিজেকে প্রদর্শন করার জন্য চটকদার কোনো একটা বিষয়ে আপনি অযথা আদালতের সময় নষ্ট করে একটি পিআইএল দাখিল করে ফেললেন। এতে তো জনকল্যাণ হবেই না, বরং আদালতের সময় নষ্ট করে আপনি অন্য বিচারপ্রার্থীদের ক্ষতি করলেন। তাই এ বিষয়ে আমি আপনাদের সংযম ও বিচক্ষণতা প্রত্যাশা করছি।’

‘আইনি পেশায় নৈতিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধ’ ও ‘বিচারিক পর্যালোচনা (রিট)’ বিষয়ে ওই সেমিনারের আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। ‘আইনি পেশায় নৈতিকতা ও নৈতিক মূল্যবোধ’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। ‘বিচারিক পর্যালোচনা (রিট)’ বিষয়ে বক্তব্য দেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক।

আইনজীবীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো মক্কেলের গোপনীয়তা রক্ষা করা উল্লেখ করে সেমিনারে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় এ বিষয়কে যতটা গুরুত্বসহকারে দেখা হয়, আমরা ততটা গুরুত্ব প্রদান করি না। কিন্তু আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আইনজীবীরা নির্দিষ্ট একটি পরিসরে তাঁদের পেশাগত কার্যক্রম পরিচালনা করেন বিধায় এখানে প্রতিযোগিতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা হয় যেন আইনি তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা। ক্লায়েন্ট (মক্কেল) বা মামলা নিয়ে হোক, কিংবা ব্যক্তিগত বা প্রফেশনাল জেলাসির কারণে হোক, আইনাঙ্গনে নিজেদের মধ্যে কদর্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবেন না। তাহলে আইনের প্রতি, আদালতের প্রতি, আইনজীবীদের প্রতি মানুষের আস্থা কমবে।’

আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আপনারা মামলা পরিচালনাকালে আদালতকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন, আদালতকে মিসগাইড করবেন না। সর্বোপরি, বিচারাঙ্গনের একজন অংশীদার হিসেবে সর্বদা বিচারিক শিষ্টাচার অনুশীলন করবেন, আপনাদের জুনিয়রদেরও শেখাবেন।’