কেমন চলছে রাজধানীর বাইরের আবাসন খাত

বড় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছেছবি: ফ্রিপিক

বাংলাদেশের আবাসন খাত একসময় ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজধানীকেন্দ্রিক। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাকেই রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কারণ, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান, করপোরেট অফিস, শিক্ষা-স্বাস্থ্য অবকাঠামো—সবকিছুই ছিল রাজধানীমুখী। ফলে বিনিয়োগকারীরা ঢাকার বাইরের বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করতেন। কিন্তু সময় বদলাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ণের প্রসার এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ নতুন চাহিদার সৃষ্টি করেছে।

এখন বড় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে। শুধু বসবাস নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এসব জায়গাকে আবাসন বিনিয়োগের জন্য নতুন সম্ভাবনায় পরিণত করছে।

আবাসনে বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগেও আবাসন ব্যবসা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বড় আবাসনব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামে। এরপর খুলনা, সিলেট, রংপুরসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে আবাসন প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। আধুনিক আবাসনের চাহিদা বাড়ছে বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা, এমনকি উপজেলা পর্যায়েও।

এ ব্যাপারে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আবাসন খাত দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। তবে ঢাকার বাইরে আবাসন খাতের বিস্তারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমন কর হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকার বাইরে শহরগুলোকে পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘আবাসন খাত বিস্তার লাভ করলে এটি আমাদের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

গাজী রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের বগুড়া শাখায় কর্মরত সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. আপেল মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার বাইরে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে আবাসন খাতের অবস্থা আগের তুলনায় যথেষ্ট ভালো। কিন্তু আশঙ্কার কথা, ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র রেজিস্ট্রেশনহীন ডেভেলপারের সংখ্যা বাড়ছে, যা আবাসন খাতের জন্য বড় ঝুঁকি এবং এটি সরাসরি রেজিস্টার্ডভুক্ত ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মো. আপেল মাহমুদ আরও বলেন, ঢাকার বাইরে আবাসন খাতের বিস্তারে অবকাঠামো উন্নয়ন যেমন সড়ক, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও ড্রেনেজ–ব্যবস্থার উন্নতি, প্রতিটি বড় শহরে পরিকল্পিত আবাসিক জোন ও আধুনিক মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন, মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীদের জন্য সহজ হোম লোন, ডেভেলপারদের জন্য করছাড় ও স্বল্পসুদে ঋণসুবিধা, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং প্রবাসী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বিশেষ হাউজিং স্কিম চালু করা উচিত। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের আবাসন খাতকে ঢাকার বাইরে আরও বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।

সঠিক নীতিসহায়তা যেমন ঋণসুবিধা, অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করা গেলে আগামী পাঁচ বছরে ঢাকার বাইরে আবাসন বাজার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে আগামী দিনে আবাসন খাতের সম্প্রসারণ আরও ত্বরান্বিত হবে। তবে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে এলাকাভেদে জমির দাম নির্ধারণ, পর্যাপ্ত নগর–পরিকল্পনার অভাব ও আর্থিক সহায়তার সহজলভ্যতা।

ঢাকাকেন্দ্রিক বিনিয়োগের চাপ কমাতে এবং আঞ্চলিক শহরগুলোতে সুষম নগরায়ণ নিশ্চিত করতে সরকার ও বেসরকারি খাতকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিসহায়তা থাকলে বিভাগীয় শহরগুলো দেশের আবাসন খাতের পরবর্তী বড় বাজারে পরিণত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।