খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের কীর্তি ধরে রাখতে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা ভবন মিলনায়তনে ‘খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ স্মারকগ্রন্থ’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে কচি-কাঁচাদের সঙ্গে অতিথিরা
ছবি: সংগৃহীত

আর্থিক খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ছিলেন সোচ্চার। তবে আর্থিক খাতে কাজ করলেও তিনি সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক কাজ করেছেন। শুধু একজন নিষ্ঠাবান ব্যাংকারই নন, সংগঠক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই ডেপুটি গভর্নরকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা ভবন মিলনায়তনে আজ শুক্রবার সকালে আয়োজন করা হয় ‘খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ স্মারকগ্রন্থ’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ‘আর্থিক খাতে কাজ করলেও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় খালেদ ভাই সর্বাত্মক কাজ করেছেন।

সমাজের অন্যায়, অনিয়ম, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাঁর বক্তব্যে খুঁজে পাওয়া যেত বাংলাদেশের শিকড়ের সন্ধান। তিনি বিশ্বাস করতেন, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম, সেই জায়গা থেকে বিন্দুমাত্র সরে আসা যাবে না।’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সব সময় মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন উল্লেখ করে আতিউর রহমান বলেন, ‘তিনি মানুষের সৃজনশীলতাকে মূল্যায়ন করতেন। তিনি মনে করতেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও যেকোনো মানুষের অভিজ্ঞতার একটি মূল্য আছে। সেটাকে শ্রদ্ধা করতে হবে, সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের জনসম্পৃক্ততার উদাহরণ দিতে গিয়ে আতিউর রহমান বলেন, ‘দুর্গম চরে বসবাসরত মানুষের উন্নয়নে তিনি ছিলেন সক্রিয়। এ কাজে বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগ ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সভাপতি হিসেবে এক দশকের বেশি সময় কাজ করেছেন তিনি। এটা আমি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পর তাঁকে সংস্থাটির দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। তিনি নিজের গাড়ির তেল পুড়িয়ে এ সংস্থার জন্য কাজ করেছেন। কোনো দিন একটা টাকাও তাঁকে দেওয়া যায়নি।’

স্মারকগ্রন্থের সংকলকদের অভিবাদন জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ‘খালেদ ভাইকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে অবদান রাখবে এই বই। এর মধ্য দিয়ে তিনি আরও বড় ও প্রবল হবেন। লেখায় ও কর্মে তিনি যা রেখে গেছেন, সেগুলো তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

পেশাগত জীবনে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ছিলেন একজন ব্যাংকার। সে প্রসঙ্গে অতিথিরা বলেন, আর্থিক খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার।

ব্যাংক খাত, পুঁজিবাজারসহ অর্থনীতির নানা বিষয়ে তাঁর মতামত ও বিশ্লেষণ ছিল নির্মোহ-দ্ব্যর্থহীন। ব্যাংকিং খাতের সুষ্ঠু বিকাশে মেধা ও দক্ষতার যে স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন, তা এ দেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

অতিথিরা আরও বলেন, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ শুধু একজন নিষ্ঠাবান ব্যাংকারই নন, সংগঠক হিসেবেও ছিলেন অনন্য। কচি-কাঁচার মেলা ছিল তাঁর আত্মার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিশু-কিশোরদের মন ও মননশীলতা চর্চায় এবং তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের জন্য তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাইয়ের প্রয়াণের পর দীর্ঘদিন ধরে তিনি কচি-কাঁচার মেলা পরিচালনার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করে কচি-কাঁচার মেলার শিশুরা। স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মেধা-প্রজ্ঞা, সামাজিক-রাজনীতিক-অর্থনীতিক ভাবনা ও বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞ নিয়ে বইটিতে লিখেছেন তাঁর শুভানুধ্যায়ী, সুহৃদসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া রয়েছে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের কর্মময় জীবনের ১১৪টি আলোকচিত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, কথাসাহিত্যিক আসমা আব্বাসী, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী, খোন্দকার মো. খালেদ, খোন্দকার সাঈদ হামিদ, কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সভাপতি রওশন আরা ফিরোজ প্রমুখ।