বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ, আসামির জামিন স্থগিত ও আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

একটি হত্যা মামলায় এক আসামিকে হাইকোর্ট যেদিন জামিন দিয়েছেন, সেদিনই নিম্ন আদালতে তাঁর জামিননামা দাখিল হয়। নিম্ন আদালত সেদিনই তা গ্রহণ করেন। এরপর তা কারাগারে পৌঁছায় ও আসামি কারামুক্তি পান। হাইকোর্টের জামিনের আদেশ পাওয়ার আগে কিসের ভিত্তিতে এই আসামির জামিননামা সম্পাদন করেছেন—এ বিষয়ে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আসামি শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদারকে দেওয়া জামিন স্থগিত করে ২১ সেপ্টেম্বরের আগে তাঁকে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় আসামি জামিন আদেশ সই-স্বাক্ষরের পর আদালত থেকে তা নামিয়ে নিলেন, তা তদন্ত করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। ৬ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতেও বলা হয়েছে।    

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে জামাল হোসেন (৪০) নামের এক যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে বিফল হন আসামি শাহিনুল ইসলাম। পরে হাইকোর্টের অবকাশকালীন একটি দ্বৈত বেঞ্চ থেকে চলতি মাসের ৩ তারিখ তিনি অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। জামিনাদেশের পর সেদিনই কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিননামা দাখিল করা হয়। আদালতের জামিননামা গ্রহণের পর তা সেদিনই কারাগারে পৌঁছায়। ৩ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে মুক্তি পান আসামি শাহিনুল। হাইকোর্টের এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন শুনানিতে ছিলেন। আসামি শাহিনুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও মুরাদ রেজা।  

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামিনের পর অস্বাভাবিক দ্রুততায় আসামি শাহিনুল কারামুক্তি পান। হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের মূল অনুলিপি ছাড়াই জামিননামা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করে তাতে সই করেন। তবে নিম্ন আদালত অনলাইনে জামিনের বিষয়ে নিশ্চিত হন। হাইকোর্টের আদেশের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই আসামি মুক্তি পান। এমনটি সাধারণত দেখা যায় না।’

আরও পড়ুন

গত ৩০ এপ্রিল রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজারে জামাল হোসেন (৪০) নামের এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করে বোরকা পরে দুর্বৃত্তরা। জামাল হোসেন তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ঘটনায় গত ২ মে নিহত জামাল হোসেনের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম ওরফে সোহেল শিকদারসহ দুজনকে গত ৬ মে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।