বিচারকাজে দীর্ঘসূত্রতা ও খরচ কমানো অগ্রাধিকার পাবে: কমিশনপ্রধান

রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ছবি: বাসস

অধস্তন আদালতে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রতা ও খরচ কমানোর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে বেশি নজর দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে নীতি ঠিক করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান।

রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষে কমিশনের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান এসব কথা বলেন। আগামী সোমবার কমিশনের পরবর্তী বৈঠক বসার কথা।

বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কোনো সুপারিশ থাকবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘অবশ্যই থাকবে। আমরা আলাপ-আলোচনা করব।’

সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার কোনো ধরনের পরিকল্পনা ও রূপরেখা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনপ্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান বলেন, ‘একটা পেপার তৈরি করেছি আজ, এটাতে একটা রূপরেখা আছে। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। তারপর গণমাধ্যমের সঙ্গে, অংশীজন নিচের কোর্টের জুডিশিয়ারি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, জেলা আইনজীবী সমিতি ও ব্যবসায়ী সমিতি আছে। তাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করব।’

আরও পড়ুন

‘বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন’ নামে আট সদস্যের কমিশন গঠন করে ৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ৬ অক্টোবর কমিশনের প্রথম বৈঠক হয়।
আজকের আলোচনায় কোন বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘প্রথমেই বলেছি, আমরা জনসাধারণের সুখ-সুবিধাগুলো দেখব। মামলা প্রসেস দিয়ে আরম্ভ হয়, মামলাটি আদালতে দায়ের করা হয়। সমন যায় বিবাদীর কাছে। বিবাদী পেলে এর উত্তর দেয়।

তারপরে মামলা আরম্ভ হয়। এখন মামলা দায়েরের পরই এই যে সমন জারি—এটা একটা বেদনাদায়ক প্রসেস। একটা সমন ইস্যুতে দেখা যায়, সাতবার, আটবার ফেরত আসে। এর কারণ দুদিকেই আছে। বাদীপক্ষের যাঁরা আছেন, তাঁরাও এর জন্য দায়ী, আদালতও দায়ী। বিবাদীপক্ষ তো থাকেই; যাতে না নিয়ে যত দিন দেরি করতে পারে। এটা কীভাবে নিরসন করা যায়, সেদিকে আমরা নজর দেব। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মামলার খরচ।…গ্রাম থেকে আসা ব্যক্তির একজন আইনজীবীর খরচা, কোর্টের বিবিধ খরচা, কোর্টে ঢুকলেই খরচা আরম্ভ হয়ে যায়। এগুলো করতে গেলে সে নিঃস্ব হয়ে যায়। এটাও চেষ্টা করব, এই খরচাটা কীভাবে কমানো যায়।’

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য পৃথক সচিবালয় নিয়ে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘রায় কার্যকর করবে কে?’ তখন সাংবাদিক বলেন, ‘সরকার।’ কমিশনপ্রধান বলেন, ‘তাহলে আমরা সেপারেশন (পৃথক) কীভাবে হলাম? সরকার ছাড়া তো আমরা চলতে পারছি না। সুতরাং অ্যাবসলিউট সেপারেশন—এটা একটা ভুল ধারণা। অ্যাবসলিউট সেপারেশন হবে না। লেজিসলেশন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, জুডিশিয়ারি বলেন—মিলেমিশে কাজ করতে হবে। অন্য যাঁরা আছেন, ওনারা যাতে জুডিশিয়ারিকে সম্মান করেন। যে রায় দেওয়া হলো, তা কার্যকর না হলে কী লাভ হলো?...সুতরাং কমপ্লিট সেপারেশন জুডিশিয়ারি বলতে কিছু নেই। কোর্ট যদি না থাকে, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চলতে পারবে না, দেশ চলতে পারবে না। দেশ চালাতে হলে জুডিশিয়ারি থাকতে হবে, যার কথা সবাইকে শুনতে হবে।’

৪৩ লাখ মামলা বিচারাধীন, মামলাজট নিরসন ও বিচার বিভাগের কার্যক্রমে গতি আনার বিষয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, এই মামলাজট কীভাবে কমানো যায়, সেটার জন্যই এ কমিশন। এ বিষয়ে সুপারিশ থাকবে। বিলম্ব ও জট, এটি অন্যতম একটি ইস্যু থাকবে।

আরও পড়ুন