পাবনা-১ আসন থেকে বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা বাদ দিয়ে পাবনা-২ আসনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া–সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের অংশটুকু আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পাবনার সংসদীয় আসন দুটি আগের মতো পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ ও বিচারপতি মো. মনজুর আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আবেদনকারীপক্ষ জানায়, স্বাধীনতার পর থেকেই পাবনা-১ আসনটি পুরো সাঁথিয়া উপজেলা এবং বেড়া পৌরসভা ও বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন (হাটুরিয়া নাকালিয়া, নতুন ভারেংগা, চাকলা ও কৈটোলা ইউনিয়ন) নিয়ে গঠিত ছিল। অন্যদিকে পাবনা-২ আসনে বেড়া উপজেলার অন্য পাঁচটি ইউনিয়ন ও পুরো সুজানগর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব দেয়। পরবর্তী সময়ে ইসি গত ৪ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে নির্বাচন কমিশন সাঁথিয়া উপজেলাকে এককভাবে পাবনা-১ আসন এবং সুজানগর ও বেড়া উপজেলাকে মিলিয়ে পাবনা-২ আসন হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।
এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বেড়া উপজেলার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম ও সাঁথিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবু সাঈদ ওই রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম ইমদাদুল হক খান। এ মামলায় ইসির সিদ্ধান্ত সমর্থন করে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হন পাবনা-১ আসনের বাসিন্দা আইনজীবী নাজিব মোমেন। তাঁর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক।
রায়ের পর আইনজীবী এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, সংসদীয় আসন দুটি নিয়ে যে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে পাবনা-১ আসনের ১ লাখ ৬০ হাজার ভোটার পাবনা-২ আসনের মধ্যে পড়ে। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে সেখানকার দুজন বাসিন্দা রিট করলে শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন। রুলের শুনানি পাবনা-১ ও পাবনা-২ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ–সংক্রান্ত গেজেটের অংশটুকু বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। পাবনা-১ ও পাবনা-২ আসনে আগে যে সীমানা ছিল, তা পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রিট আবেদনকারীদের এই আইনজীবী আরও জানান, ১৯৭২ সালের পর থেকে যে ১২টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তাতে পাবনা-১ ও পাবনা-২ একই সীমানা ছিল, কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমনকি গত ৩০ জুলাই সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস বিষয়ে নির্বাচন কমিশন প্রাথমিক তালিকা করে, তাতেও পরিবর্তন আনেনি। তবে এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির সুযোগ না দিয়ে বেড়া উপজেলার যে অংশ পাবনা-১ সংসদীয় আসনে ছিল, পুরোটা পাবনা-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করে ইসি।
রিটে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হওয়া আইনজীবী নাজিব মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, রায় পেলে পর্যালোচনা সাপেক্ষে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।