জলবায়ুর টাকায় সড়কে বাতি বসানোর হিড়িক

পাঁচ বছরে সড়কবাতির প্রকল্প ২০৯টি, ব্যয় ৩৩৮ কোটি টাকা। মোট প্রকল্পের ৬৫% নেওয়া হয়েছে সড়কবাতি বসাতে।

চারদিকে পানি; কিন্তু সে পানি পান করার উপায় নেই, লোনা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলের নারীদের তাই বহুদূর থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হয়।

শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রামের শ্রাবণী বিশ্বাস (৩৯) বলছিলেন, তাঁকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে প্রতিদিন দুইবার যাওয়া-আসা করতে হয় সুপেয় পানির জন্য। বাড়ির কাছে একটা ব্যবস্থা হলে এত কষ্ট তাঁকে করতে হতো না।

শ্রাবণীর মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের শিকার নারীদের জন্য সরকারের একটি তহবিল আছে। নাম ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট (বিসিসিটি)’, যা জলবায়ু তহবিল নামেও পরিচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের জীবনে বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্প নিতে এই তহবিল গঠন করা হয় ২০০৯ সালে।

জলবায়ু তহবিলের টাকায় ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩২২টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০৯টি সড়কবাতি বসানোর প্রকল্প, যা মোট প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই তহবিলের টাকায় একের পর এক সৌরবিদ্যুতের সড়কবাতি বসানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছে গত পাঁচ বছরে। যদিও সড়কবাতি বসানোর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারও এ ধরনের প্রকল্পকে অগ্রাধিকারে রাখেনি। অন্যদিকে সড়কে জলবায়ু তহবিলের টাকায় বসানো সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল ও বাতি বেশি দিন টিকছেও না।

জলবায়ু তহবিলের টাকায় ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩২২টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০৯টি সড়কবাতি বসানোর প্রকল্প, যা মোট প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৩৮ কোটি টাকা। ২৩টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে নর্দমা নির্মাণের জন্য। এতে ব্যয় হবে ৪১ কোটি টাকা।

বাকি ৯০টি প্রকল্পের মধ্যে ইকো-ট্যুরিজম, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, মাটির ক্ষয়রোধ, উর্বরতা শক্তির হ্রাস ঠেকানো, জলাশয়ে সবজি ও মসলা চাষ, সারা দেশে বনায়নের লক্ষ্যে চারা উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব জলবায়ু-সহনীয় গৃহনির্মাণ, জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ ইত্যাদি বিষয়ে প্রকল্প রয়েছে।

জলবায়ু তহবিলটি গঠন করা হয়েছিল মূলত অভিযোজনের (জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো) ওপর গুরুত্ব দিয়ে। কিন্তু সড়কবাতি ও নর্দমা নির্মাণের সঙ্গে অভিযোজনের কোনো সম্পর্ক নেই।
সাবের হোসেন চৌধুরী, পরিবেশমন্ত্রী

সব মিলিয়ে ২০১৯ সাল থেকে নেওয়া ৩২২টি প্রকল্পে মোট ব্যয় কত তা জানা সম্ভব হয়নি। তহবিল পরিচালনাকারী ব্যক্তিরা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না। তবে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তহবিলটির মাধ্যমে ৯৬৯টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।

জলবায়ু তহবিলের টাকায় কীভাবে সড়কবাতি বসানো ও নর্দমা নির্মাণের মতো প্রকল্প নেওয়া হলো জানতে চাইলে পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে যা হয়েছে, তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করবেন না। তবে ভবিষ্যতে জলবায়ু তহবিলের টাকায় কোনো সড়কবাতি ও নর্দমা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু তহবিলটি গঠন করা হয়েছিল মূলত অভিযোজনের (জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো) ওপর গুরুত্ব দিয়ে। কিন্তু সড়কবাতি ও নর্দমা নির্মাণের সঙ্গে অভিযোজনের কোনো সম্পর্ক নেই।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির শিকার শীর্ষ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। অলাভজনক সংস্থা জার্মান ওয়াচের ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার ১০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ৭ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ।

জলবায়ুর টাকায় সড়কবাতি বসানোর এত আগ্রহের কারণ জানতে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল কার্যালয়ের অন্তত পাঁচ কর্মকর্তা ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ‘খাতিরের ভিত্তিতে’ এ ধরনের প্রকল্প দেওয়া হয়। অর্থছাড় পেতে অবৈধ লেনদেন হয়। প্রকল্পের বাস্তবায়নও সহজ। সাধারণ মানের সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল কিনে একটি খুঁটি গেড়ে সেটি বসিয়ে দিলেই হলো। কাজ সহজ হলেও মুনাফা অনেক বেশি। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনবিষয়ক প্রকল্প নিতে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা ঝামেলাপূর্ণ। বাস্তবায়ন করাও কঠিন। কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একেকটি সড়কবাতি বসাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল বছরভেদে সোয়া লাখ টাকা থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা। ভালোমানের সৌর প্যানেল, ব্যাটারি ও খুঁটির দাম এখন ৬০ হাজার টাকার আশপাশে।

২০২০ সালের নভেম্বরে সাতটি প্রকল্প নিয়ে এক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানায়, ওই সাত প্রকল্পের অর্থের ৫৪ শতাংশের বেশি অর্থ আত্মসাৎ ও অপচয় হয়েছে। সাতটি প্রকল্পই রাজনৈতিক সুপারিশের ভিত্তিতে অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প অনুমোদনে তৎকালীন একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীকে ১০ শতাংশ অর্থ অগ্রিম ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জয়বায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় প্রকল্প নিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থে জলবায়ু তহবিল গঠন করে। তহবিল পরিচালনায় পরের বছর একটি আইন করা হয়।

১০ মন্ত্রী, ৫ সচিবের বোর্ডে অনুমোদন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির শিকার শীর্ষ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। অলাভজনক সংস্থা জার্মান ওয়াচের ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার ১০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ৭ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ।

জয়বায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় প্রকল্প নিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থে জলবায়ু তহবিল গঠন করে। তহবিল পরিচালনায় পরের বছর একটি আইন করা হয়। আইনের আওতায় তহবিল পরিচালনায় একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান পরিবেশমন্ত্রী। সদস্য হিসেবে অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রীসহ ১০ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঁচজন সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও রয়েছেন ওই বোর্ডে। তহবিলের আওতায় প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয় এই বোর্ড।

দরকার ছিল বলেই সড়কবাতির প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
শাহাব উদ্দিন, বিগত পরিবেশমন্ত্রী

২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাস্ট্রি বোর্ডের একটি সভা হয়। এতে ৬৯টি প্রকল্প অনুমোদন পায়। যার মধ্যে ৫৭টি ছিল সড়কবাতির। সড়কবাতির প্রকল্পগুলোতে মোট ব্যয় হবে ৮৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ বৈঠকটি হয় গত অক্টোবরে। সেখানে অনুমোদন দেওয়া হয় ৪৭টি প্রকল্প, যার ৩২টি সড়কবাতির। এসব সড়কবাতির প্রকল্পের ব্যয় ৫২ কোটি টাকা।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাজ প্রকল্পগুলো ট্রাস্টি বোর্ডের বৈঠকে তোলা। কোন প্রকল্প অনুমোদন পাবে, তা ঠিক করে বোর্ড।

বিগত সরকারে পরিবেশমন্ত্রী ছিলেন শাহাব উদ্দিন। তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর মেয়াদকালেই সড়কবাতির প্রকল্প বেশি নেওয়া হয়েছে। কেন জানতে চাইলে তিনি বুধবার (২০ মার্চ) প্রথম আলোকে বলেন, দরকার ছিল বলেই সড়কবাতির প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সড়কবাতি বসানো ও নর্দমা নির্মাণের কোনো সম্পর্ক নেই। বিগত পাঁচ বছরে সড়কবাতি ও নর্দমার বহু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা অনুমোদন করাই উচিত হয়নি।
আইনুন নিশাত, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞ

অবশ্য জলবায়ু তহবিলের টাকা কোথায় খরচ হবে তা ২০০৯ সালে করা জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনায়ই (বিসিসিএসএপি) বলা আছে। সেখানে অভিযোজনের পাঁচটি খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার পাওয়া খাতগুলো হলো খাদ্যনিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য, সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো, গবেষণা ও জ্ঞান ব্যবস্থাপনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি। কম গুরুত্ব দেওয়া হয় কার্বন নিঃসরণ কমানোসহ প্রশমনে, অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন কমানোর কাজে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় অভিযোজন বলতে বাঁধ নির্মাণ, সুপেয় পানি সরবরাহ, লবণসহিষ্ণু ফসলের বীজ উৎপাদন, ভাসমান সবজি চাষের মতো প্রকল্প এবং প্রশমন বলতে সড়কবাতি, রেস্ট হাউস, নর্দমা নির্মাণের মতো প্রকল্পকে বোঝানো হয়। প্রশমনকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদিও দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে প্রশমন।

বোর্ডের সদস্যদের একজন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সড়কবাতি বসানো ও নর্দমা নির্মাণের কোনো সম্পর্ক নেই। বিগত পাঁচ বছরে সড়কবাতি ও নর্দমার বহু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যা অনুমোদন করাই উচিত হয়নি।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের আগে সুপেয় পানি ও বাঁধ নির্মাণের মতো অভিযোজন খাতের প্রকল্পগুলো গুরুত্ব পেত। এরপর থেকে সড়কবাতি ও নর্দমা নির্মাণের মতো প্রকল্প বেশি নেওয়া হচ্ছে। সুপেয় পানির সংকট কাটানোর মতো প্রকল্প কম। যেমন সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। তবে উপজেলা দুটিতে সেই সংকট দূর করতে পাঁচ বছরে জলবায়ু তহবিলের আওতায় কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আতাউল হক গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, শ্যামনগরে সুপেয় পানির সংকট দূর করার প্রকল্পের জন্য জলবায়ু তহবিল থেকে টাকা পেতে অনেক চেষ্টা করেছি। তবে টাকা পাইনি। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি সুপেয় পানির প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

বাতি জ্বলে না

জলবায়ু তহবিলের টাকায় বসানো সড়কবাতি কতটা আলো দিচ্ছে, তা দেখতে প্রথম আলোর ছয় প্রতিনিধি ছয়টি পৌরসভা ঘুরে দেখেন—চুয়াডাঙ্গা, যশোরের চৌগাছা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, নওগাঁ ও পিরোজপুর। সেসব স্থানে দেখা যায়, কোথাও কোথাও বছর না ঘুরতেই সৌরবিদ্যুতের প্যানেল অকেজো হয়ে গেছে। অনেক বাতি জ্বলে না। কোথাও সূর্যাস্তের পর বাতি জ্বলে উঠলেও কয়েক ঘণ্টা পর তা নিভে যায়। যদিও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল পাঁচ বছর টেকার কথা। বাতি সারা রাত জ্বলার কথা।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় ২০১৯ ও ২০২২ সালে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কবাতি বসানোর দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়। পৌরসভাটি ঘুরে দেখা যায়, ইস্পাতের খুঁটি, সৌর প্যানেল, ব্যাটারি ও বাতি আছে। তবে বেশির ভাগ বাতি জ্বলে না, আলো পাওয়া যায় না। পৌরসভাটির মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সড়কবাতি নিয়ে হতাশা জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, অনেক বাতি অচল। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য অনেকাংশেই ব্যাহত হয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে দুই বছর আগে সৌরবিদ্যুতের ১৫০টি বাতি বসানো হয়েছিল। এর মধে৵ ৩০টির বেশি সৌর প্যানেল এখন অকেজো। বাতি জ্বলে না।

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া জামে মসজিদের সামনে গিয়ে গত শনিবার দেখা যায়, ফটকের পাশে বসানো সৌর প্যানেলটি অকেজো। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এলাকায় আটটি সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়। চারটি অচল হয়ে আছে। বরাদ্দ না থাকায় (মেরামতের টাকা) সচল করা যাচ্ছে না।

২০২০ সালে গোপালগঞ্জ পৌর এলাকায় সৌরবিদ্যুতের সড়কবাতি বসানোর প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটি সরেজমিন দেখতে যান জলবায়ু পরিবর্তন তহবিলের সহকারী পরিচালক মোস্তফা রায়হান। তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) অনুমোদিত নকশা ও মানদণ্ড অনুযায়ী সড়কবাতি বসানো হয়নি। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বাতিগুলোর সক্ষমতা নির্দিষ্ট মানের অর্ধেক।

মোস্তফা রায়হান প্রতিবেদনে আরও লিখেছেন, অনেক জায়গায় বাতি চুরি হয়ে গেছে, কোথাও সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল খুলে অন্যত্র লাগানো হয়েছে, কোথাও ছায়ার মধ্যে বসানো হয়েছে, কোথাও বাতি জ্বলে না।

বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছিলেন মুহিত

জলবায়ু তহবিলের টাকায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫ সালের এপ্রিলে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের সব সদস্যের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘তহবিলটি যেভাবে চলছে, তাতে এটি আর রাখার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না।’

যদিও পরে তহবিল বন্ধ না করে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে তহবিলটিতে বছরে ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো। ২০১৫ সালের পর থেকে তা কমিয়ে ৫০-১০০ কোটি টাকায় আনা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১০০ কোটি টাকা।

সরকারের তহবিল, শত শত প্রকল্প, সড়কবাতি—এসব সম্পর্কে জানেন না শ্যামনগরের শ্রাবণী বিশ্বাস। তিনি শুধু জানেন, সন্তানদের পানি পান করাতে তাঁকে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার দূরে যেতে হবে। শ্রাবণী প্রথম আলোকে বলছিলেন, ১৩ বছর ধরে তিনি পানি টানছেন। দিনে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘তাহলে কও দেখি (পানি টানার পেছনে) জীবন থেকে কত বছর চলে গেল।’

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজারনোয়াখালী, প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁপিরোজপুর এবং যশোর অফিস।]