কক্সবাজারের ওই তরুণী মা-বাবার হেফাজতে থাকবেন

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

কক্সবাজারের এক তরুণী তাঁর মা–বাবার হেফাজতেই থাকবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তরুণীর শারীরিক–মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাঁর ইচ্ছা অনুসারে শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তরুণীর বাবাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যোগাযোগের জন্য তরুণীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিভাইস (মুঠোফোন) দিতে তাঁর বাবাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ আদেশ দেন। এর আগে রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে তরুণী, তাঁর মা–বাবা এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনা হয়। তরুণীকে (প্রায় ১৮ বছর) মুঠোফোন ব্যবহার করতে না দেওয়া এবং বেআইনি আটক রাখার অভিযোগ নিয়ে তাঁর বন্ধু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক চলতি মাসে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে ওই তরুণীকে ২৬ জানুয়ারি আদালতে উপস্থিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতের আদেশ অনুসারে আজ সকালে মা–বাবার সঙ্গে তরুণী আদালতে উপস্থিত হন। আদালতে উপস্থিত হন বন্ধু হিসেবে করা রিট আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের সেই নাগরিকও। রিটে ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে আজ যুক্ত হয় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। আদালত রুদ্ধদ্বার কক্ষে তরুণী, তাঁর মা–বাবা এবং উভয় পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে মধ্যাহ্নবিরতির পর বেলা আড়াইটার দিকে আদেশ দেন।

রিট আবেদনকারীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার ও আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ এবং তরুণীর বাবার পক্ষে আইনজীবী কারিশমা জাহান ও আশরাফ জালাল খান আদালতে শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।

আদেশের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান প্রথম আলোকে বলেন, অফিশিয়ালি একজন মনোবিজ্ঞান চিকিৎসক নির্ধারণ করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রতি মাসে একবার তরুণী এবং তাঁর মা–বাবার পরামর্শ/কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। প্রতি মাসে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছেন আদালত।

রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর তথ্যমতে, ওই তরুণী বাংলাদেশি। রিট আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের (২২) সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পরিচয় হয়। তরুণী কক্সবাজারে থাকতেন। পরিবারকে না জানিয়ে পড়াশোনার জন্য তিনি গত ডিসেম্বরে ঢাকায় চলে আসেন। এদিকে তরুণীর সন্ধান পেতে তাঁর বাবা কক্সবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তরুণী তাঁর ওই বন্ধুকে (যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক) নিয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থায় যান। সেখানে গত ১০ ডিসেম্বর উভয়ের (তরুণী ও তাঁর অভিভাবক) মধ্যে মধ্যস্থতা হয়। তবে মধ্যস্থতার সিদ্ধান্ত অনুসরণ না করে বাবা তরুণীকে নিয়ে কক্সবাজার চলে যান। তরুণীর বন্ধু গত মাসের শেষ দিকে জানতে পারেন যে তরুণীকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের মানসিক ওষুধ সেবনে বাধ্য করা হয়েছিল। এ ছাড়া তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া এবং সাহায্য চাওয়ার পথ রোধ করা হয়। এ অবস্থায় নিজেকে তরুণীর বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিকার পেতে হাইকোর্টে রিট করেন যুক্তরাষ্ট্রের ওই নাগরিক।