এবারের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকীর দিনটি ব্যতিক্রম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে প্রথমবারের মতো জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালন করায় এবারের দিনটি ব্যতিক্রম বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ মঙ্গলবার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকীতে বনানী সামরিক কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এসব কথা জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পরেই তিন বাহিনী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শ্রদ্ধা জানানোর আগে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
১৬ বছর আগে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এতে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে তখন পিলখানায় নিহত হন ৭৪ জন। সেদিন পিলখানায় থাকা সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও নৃশংসতার শিকার হন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ৫৭ জন অফিসার শাহাদাতবরণ করেছেন, সব মিলিয়ে ৭৪ জন শাহাদাতবরণ করেছেন। তাঁদের আত্মার মাগফিরাতের জন্য এসেছি, এটা প্রতিবছরই আসা হয়। কিন্তু এবার একটু ডিফারেন্স হইলো। এবার থেকে এটা শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ডিক্লেয়ার করা হইছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের দুইটা মেইন দাবি ছিল—একটা বিচারের দাবি, আরেকটা শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা। আমরা কিন্তু শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করেছি। আজকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবেই কিন্তু পালন করা হচ্ছে। আরেকটা দাবি ছিল বিচার, ওই জন্য কিন্তু আমরা কমিশন করে দিয়েছি এবং ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হইছে কমিশনের কাজ। তাদের তিন মাস সময় দেওয়া হইছে, তাদের রিপোর্টের বেসিসে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
গত ১৫ বছরে কেন শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তাঁর পক্ষে এটা বলা সম্ভব নয়।
সঠিক বিচার নিয়ে স্বজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘সঠিক বিচার যেন হয়, এ জন্যই কিন্তু একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাদের রেকমন্ডেশনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী অ্যাকশনটা নেব।’
বিডিআর বিদ্রোহের হত্যা মামলায় সাজাভোগ শেষ হলেও বিস্ফোরক মামলাটি থেমে থাকায় অনেকে কারাগারে রয়েছেন। এ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘হত্যা মামলায় যাদের সাজা হয়েছিল, তারপর বিস্ফোরক মামলার জন্য কিন্তু অনেকে তাদের সাজা ভোগ হওয়ার পরও জেলে ছিল। তাদের কিন্তু অনেকেরই জামিন হয়ে গেছে। আরও যদি এ রকম থাকে, কোর্ট বসলে এটা দেখবেন, এটা আমাদের হাতে না। সম্মানীয় কোর্ট যদি তাদের জামিন দিয়ে দেন, দিয়ে দেবেন।’
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস। দিনটি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এ বিষয়ে গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়।
ঢাকায় বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে গতকাল সোমবার রাত থেকে কম্বাইন্ড টহল পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সফলতা এবং ব্যর্থতা—আপনারা আমাদের তথ্য দিতে পারবেন। আমরা যেভাবে এটা সাজিয়েছি, এটার কোনো জায়গায় কোনোরকমের গাফিলতি যদি আমার কর্মচারী বা আমার বাহিনীর ভেতরে থাকে, তাহলে আমি তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’
এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার ঠিকমতো কাজ না করলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান তিনি।
কাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কী অবস্থা, তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঠিক সংবাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘সকাল পর্যন্ত আপডেট ভাবছি আপনারা দেবেন। আমার মনে হয় আল্লায় দিলে ভালো। আপনারা কারেক্ট রিপোর্টটা দেবেন। আগে সংবাদ দিতে পারেননি, এখন সংবাদ দেন, কিন্তু সঠিক সংবাদটা দেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, সত্যি সংবাদ দেন। সত্যি সংবাদের বেজ কইরা দেখেন আমরা অ্যাকশন নিই কি না। কারেক্ট সংবাদ পরিবেশন করেন, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’