বিচারে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না: আইনমন্ত্রী

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

বিচারের মাধ্যমে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীকে দোষী বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভুঁঞা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আইনমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা একদিকে জামায়াতে ইসলামীকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধন করছেন। আরেক দিকে দলটিকে ১০ বছর পর সমাবেশ করতে মাঠে নামার সুযোগ করে দিয়েছেন। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক মাস ধরে একটি রাজনৈতিক দল সমাবেশের চেষ্টা করে আসছে। তাদের বাদ দিয়ে আপনারা জামায়াতে ইসলামীকে সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছেন। এটা সাংঘর্ষিক কি না?’

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি সাংঘর্ষিক মনে করেন না। চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না। বিচার করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি বলতে পারবেন না, জামায়াত নিষিদ্ধ।

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। এ-সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনের জন্য কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে পারেন।

ভিসা নীতি অপমানকর

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বিষয়ে তিনি পিটার হাসকে জানিয়েছেন, এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। সেটা যার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যদি বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তিনি বলবেন, এটি অপমানজনক।

আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, এই ভিসা নীতি যদি যুক্তিসংগতভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাঁদের কোনো বক্তব্য নেই। আর যদি ইচ্ছেমতো একটি দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়, তাহলে তাঁদের আপত্তি আছে।

আনিসুল হক আরও বলেন, তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে এ কথাও বলেছেন, ভিসা নীতি নিয়ে সরকার বিচলিত নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার আছে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাহলে কি আপনি বলতে চান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই ওই দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়েছেন।

খালেদা সুস্থ হলে তাঁর দায়িত্ব বাকি সাজা খাটা

রাজনৈতিক সভা ও আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে। যদি কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনের কারণে দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আর তিনি যদি কোনো রাজনৈতিক সভায় যোগ দেন, তাহলে প্রমাণিত হবে, তিনি সুস্থ। স্বাভাবিকভাবে তিনি যদি সুস্থ হন, তাহলে তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে বাকি সাজা খাটা। যে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে (খালেদা) মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি বাতিল হলে সাজা কার্যকর হবে। তাঁর সাজার মেয়াদ এখনো রয়ে গেছে।

সংলাপের পরিকল্পনা নেই

বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কোনো পরিকল্পনা বা ভাবনা আছে কি না—এমন প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এমন কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। এমন চিন্তা করা হচ্ছে না। এমন ভাবনা আসবেও না।

কিছু গুম আছে, যাঁরা বাসায় বসে আছেন

গুমের অভিযোগ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, গুম নিয়ে যখন কথা হয়, তখন তাঁরা গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। তখন সংবাদপত্র বলা শুরু করল, সরকার তাদের হয়রানি করছে। তখন তাঁরা তাদের (পরিবার) বললেন, পুলিশকে জানান। কিন্তু তারা (পরিবার) সাড়া দিল না। এতে তাঁদের কী করার আছে! তারা (পরিবার) তো সহযোগিতা করছে না।

আইনমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু গুম আছে, যাঁরা বাসায় বসে আছেন। কিন্তু গুমের অভিযোগ তুলছেন।

অপরাধের মামলা হচ্ছে

বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার হয়রানিমূলক মামলা করছে বলে যে অভিযোগ—এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক সাংবাদিক। জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার কথা বলছে, সেটা ঠিক নয়। তাদের অপরাধের জন্য মামলা হচ্ছে। ২০০১ সালের পর তারা আওয়ামী লীগের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করেছে। মামলা কোনো অপরাধ ছাড়া হয় না।

নির্বাচনকালে ছোট সরকার হবে

আইনমন্ত্রী বলেন, সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব আছে, তাদের নিয়ে নির্বাচনকালে একটি ছোট সরকার গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য তার কাজ করবে। আর সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত না নিয়ে দৈনন্দিন কাজ করবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এর আগে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে অঙ্গীকার করেছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তিন দল

আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে তিন দল আছে। একদল চায়, আইনটি বাতিল হোক। আরেক দল চায় সংশোধন হোক। আরেক দল আছে যারা চায় যেভাবে আছে সেভাবেই থাকুক। মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইন যাতে হয়রানিমূলক ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ মানুষের মনে যাতে এই আইন নিয়ে ভয় কাজ না করে সেই ব্যবস্থা করা হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আরও ১০-১৫ বছর

আইনমন্ত্রী জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত সব মামলার নিষ্পত্তি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থাকবে। এখনো সেখানে যত মামলা আছে, তাতে আরও ১০ থেকে ১৫ বছর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলবে।


মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনসচিব গোলাম সারওয়ার ও ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকার।