ঈদের আগের দিন চট্টগ্রামে বাড়তি ভাড়া আদায়, দুর্ভোগে যাত্রীরা

ঈদের আগের দিনও বাড়ি যেতে সড়কে ভিড় করছেন লোকজন। গাড়ি কম আর ভাড়া বেশি হওয়ায় এ সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায়ছবি: সৌরভ দাশ

গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আজ বুধবারও চট্টগ্রাম শহর ছাড়ছেন লোকজন। শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রামের বাস কাউন্টারগুলোয় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। যাত্রীর তুলনায় বাসের সংকট দেখা দেয়। গাড়ির অপেক্ষায় ঘরমুখী মানুষদের কাউন্টার ও সড়কের পাশে অপেক্ষা করতে হয়। আবার চাপ বাড়ার এ সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

আজ দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু গোলচত্বর ও বহদ্দারহাটের এক কিলোমিটার এলাকায় এই দৃশ্য দেখা যায়। এখান থেকে কক্সবাজার, বান্দরবান জেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাস ছেড়ে যায়। এ ছাড়া শাহ আমানত সেতু গোল চত্বর থেকে নগরের পাশের উপজেলা আনোয়ারা, বাঁশখালী, কর্ণফুলীর উদ্দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়ে। বাস ও অটোরিকশা—সবখানে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

গ্রামের বাড়িতে যেতে স্ত্রী-সন্তানদের গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য শাহ আমানত সেতু এলাকায় আসেন শহীদুল আলম। চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় তাঁর দোকান আছে। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে বহদ্দারহাটে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ায়। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন স্ত্রী-সন্তান। তিনি যাবেন ঈদের দিন সকালে।

শহীদুলের কাছ থেকে জনপ্রতি দেড় শ টাকা করে বাসভাড়া চাওয়া হয়। অথচ নিয়মিত ভাড়া ১০০ টাকা। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে দর-কষাকষি করেও লাভ হয়নি। অবশেষে বাড়তি ভাড়াই গুনতে হলো।

বেসরকারি চাকরিজীবী শারমিন আক্তার স্বামী–সন্তানসহ ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রেমবাজারে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। স্বামী ও নিজের চাকরির কারণে চট্টগ্রাম শহরে থাকেন। প্রেমবাজারে যেতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ১ হাজার ২০০ টাকা ভাড়া দাবি করে। অথচ এই ভাড়া ৫০০ টাকা। শেষ পর্যন্ত দর-কষাকষি করে ১ হাজার টাকায় রাজি হন গাড়িচালক।
চালকের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে শারমিন বলেন, ‘এক-দুই শ টাকা বাড়তি নিতে পারেন। কিন্তু তাই বলে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া নেবেন? মানুষকে জিম্মি করার মতো অবস্থা। আবার না দিয়েও উপায় নেই। ঈদ করতে বাড়িতে যেতে হবে।’

আজ দুপুরে শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাড়িমুখী মানুষের ভিড়। কেউ আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। আবার কেউ আসছেন একা। মানুষের ভিড় ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছিল। দূরের যাত্রীরা বাস কাউন্টারগুলোয় গিয়ে গাড়ির খোঁজ নিচ্ছেন। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা লোকাল গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। তাঁদের অনেককেই এই তীব্র গরমের মধ্যে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকতে দেখা যায়। গাড়ি আসলে হুড়মুড় করে উঠে পড়ছেন। আবার গাড়িতে উঠে ভাড়ার কথা শুনে বচসাও চলে সমানতালে।

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার জন্য একটি বাস কাউন্টারে আসেন পোশাকশ্রমিক সালমা সুলতানা। কক্সবাজারের রামুর এই বাসিন্দা চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ওই এলাকায় থাকেন। প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর বাসের টিকিট পান তিনি। এই সময় প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে তিনি একা থাকেন। স্বামী ও তিন সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকেন। চাকরির কারণে খুব একটা গ্রামে যাওয়া হয় না। শুধু ঈদের সময় যান। অপেক্ষায় থাকেন ঈদের জন্য। এখন ছুটি পেয়ে বাড়ি যাচ্ছেন।

ঈদের আগের দিনও বাড়ি যেতে সড়কে ভিড় করছেন লোকজন। গাড়ি কম আর ভাড়া বেশি হওয়ায় এ সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁদের। আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের ফিশারিঘাট এলাকায় একটি মাছ ধরার জাহাজে চাকরি করেন ওসমান গণি। কক্সবাজারের চকরিয়ার এই বাসিন্দা ঈদের ছুটি পেয়েছেন আজ সকালে। ছুটি পেয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য চলে এসেছেন বাস কাউন্টারে। তিনি বলেন, বাস কাউন্টারগুলোয় মানুষের ভিড়। গাড়িও কম। দু-তিনটি কাউন্টারে খোঁজ নিয়েও টিকিট পাননি। পরে একটি কাউন্টার থেকে বাসের টিকিট নিয়েছেন।

ওসমান গণি বলেন, ঈদের আনন্দ পরিবার-পরিজনের সঙ্গেই। তাই যত দুর্ভোগই হোক, বাড়ি চলে যান। সেখানে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান সবাই আছেন। অন্য আত্মীয়স্বজন আছেন। সবার সঙ্গে মিলে ঈদের আনন্দ উদ্‌যাপন করতে চান।

বাস কাউন্টারগুলোয় গাড়ির অপেক্ষায় যাত্রীদের বসে থাকতে দেখা যায়। কাউন্টারের সামনেও ছিল ভিড়।  

বাস কাউন্টারগুলোর ব্যবস্থাপকদের দাবি, ভাড়া বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। যাত্রীও বেশি নেই। ঈদের লম্বা ছুটি হলেও ভিড় স্বাভাবিক সময়ের মতো। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাড়িমুখী মানুষের চাপ কম।
যদিও শাহ আমানত সেতু গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান করে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।