নানা আয়োজনে শুরু হলো রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন

সারা দেশ থেকে আসা ৭০০ জনের বেশি শিল্পী অংশ নিচ্ছেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আজ শুক্রবার এ সম্মেলন শুরু হয়েছেছবি: প্রথম আলো

শুরু হলো রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন। সারা দেশ থেকে আসা ৭০০ জনের বেশি শিল্পী অংশ নিচ্ছেন এ আয়োজনে।

আজ শুক্রবার সকালে অধিবেশনের উদ্বোধন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ সংগীতের সঙ্গে প্রদীপ প্রজ্বালন করে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। বোধনসংগীত ছিল ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে’।

স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজ প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের মধ্যে একদিকে বিশ্বব্যাপী কালান্তর ঘটে চলেছে। অন্যদিকে বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে মানবতার চরম লাঞ্ছনা। গাজায় হত্যাযজ্ঞে প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানবতার বিপর্যয় নিয়ে যে আর্তি প্রকাশ করেছিলেন, তা থেকে যেন কিছুই শেখা হয়নি বলে মন্তব্য করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উদ্বোধনী বক্তব্যে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, নিবেদিত প্রাণের শিল্পী জাহিদুর রহিমকে স্মরণ করার সূত্র ধরে সূচনা হয়েছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের। আজ দেশের রবীন্দ্রসংগীত চর্চার শুদ্ধ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলা অন্যতম প্রতিষ্ঠান এটি। নজরুলসংগীত, পঞ্চকবির গান ও লোকসংগীত প্রচারেও তাদের কাজ গুরুত্বপূর্ণ।

রামেন্দু মজুমদার আরও বলেন, প্রতিবছর এই বার্ষিক অধিবেশনের মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নবীন প্রতিভাদের সামনে নিয়ে আসা হয়। আবার ঢাকা থেকে শিক্ষকেরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেন, তা–ও গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজটি শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম বিশেষ রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী প্রয়াত ওয়াহিদুল হক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়াহিদুল হকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান রামেন্দু মজুমদার। তাঁর বক্তব্যে আরও উঠে আসে, ‘রবীন্দ্রনাথ শুধু উত্তরাধিকারসূত্র পাওয়া নয়, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের পাওয়া হয়েছে সে কথা।’

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আজ জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন শুরু হয়
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, ‘তবুও মানুষের প্রতি ভরসাই এনে দিতে পারে অন্ধকার সরিয়ে আলো। তাই বোধনসংগীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের নিশিদিন ভরসা রাখিস গানটি। এত বছর পরেও রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে কেন সমানভাবে প্রাসঙ্গিক, সে উদাহরণ তুলে ধরে আতিউর রহমান বলেন, আজকের বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক ঘটে, তবে সবচেয়ে বড় দুর্যোগটি ঘটে গিয়েছে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে। প্রতিটি পর্যায়ে আমরা সংখ্যা বাড়িয়েছি, কিন্তু গুণমান নিয়ে খুব সচেতন ছিলাম না। এখনো আমরা মানবিক, সৃষ্টিশীল ও অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দিয়ে উঠতে পারছি না। রবীন্দ্রনাথ বলতেন, শিক্ষার পাঠক্রম শিক্ষালয়ের বাইরের জগৎ নিয়েও। তাই স্বদেশের পাশাপাশি গোটা বিশ্বকে বুঝতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’

আতিউর রহমানের বক্তব্যের পর শুরু হয় গীতি–আলেখ্য: সত্যের আনন্দ রূপ এই তো জাগিছে। দুপুরের আয়োজন কিশোর বিভাগের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। প্রথম দিনের সন্ধ্যার আয়োজনে রয়েছে প্রদীপ প্রজ্বালন, সংগীতানুষ্ঠান, নৃত্য আলেখ্য। তিন দিনের এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ৯ মার্চ সকালে আছে সাধারণ বিভাগের প্রতিযোগিতা, প্রতিনিধি সম্মেলন, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। ১০ মার্চ সকালে শেষ হবে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনের ৪২তম অধিবেশন।