জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পরনির্ভরশীলতা কাটাতে ওষুধের কাঁচামালশিল্পের বিকাশ প্রয়োজন। এই শিল্পের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। নীতি ও আর্থিক সহায়তা পেলে বাংলাদেশ বছরে ২০ লাখ ডলারের ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ রপ্তানি করতে পারবে।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ওষুধের কাঁচামাল প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ীরা এ কথা বলেন। সভাটি আয়োজন করে ওষুধের কাঁচামাল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোর্চা বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএআইএমএ)।
সভায় বিএআইএমএর সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, দেশে প্রয়োজনের ৯৫ শতাংশ ওষুধ তৈরি করে দেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো। কিন্তু ওষুধের কাঁচামাল ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ওষুধের কাঁচামালের ক্ষেত্রে ভারত ও চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা দীর্ঘ দিনের। এই নির্ভরতা কমাতে না পারলে বাংলাদেশের ওষুধের নিরাপত্তা–হুমকিতেই থেকে যাবে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ওষুধের কাঁচামালের বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছে। কমিশন কাঁচামালশিল্পকে নীতি ও আর্থিক সহায়তা দিতে সুপারিশ করেছে।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা বলেন, ওষুধের কাঁচামালশিল্পে ভারত ও চীন বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রণোদনা ও কর মওকুফের ব্যবস্থা রেখেছে। দেশে এই শিল্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন। বাংলাদেশে এই শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হলে ব্যবসায়ীদের জন্য ৫-১০ বছর আর্থিক সহায়তা ও করছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএবিএমএর সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, ‘এক দশকের বেশি সময় ধরে দেখছি, আমাদের কথা কেউ মনোযোগ দিয়ে শুনতে চায় না। ছোট একটি কাজ নিয়ে মাসের পর মাস বছরের পর বছর দৌড়াতে হয়। একটি টাস্কফোর্স বা উপদেষ্টা পরিষদ ধরনের কিছু থাকলে, তাদের মাধ্যমে কাজ হতে পারে বলে আমরা মনে করি।’
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে প্রথম ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস। বর্তমানে ১৫-১৬টি কোম্পানি ওষুধের কাঁচামাল তৈরি করে। প্রয়োজনের ১০ শতাংশ কাঁচামাল দেশে তৈরি হচ্ছে। তাঁদের হিসাবে, ৭০টির মতো ওষুধের কাঁচামাল তৈরির অনুমোদন আছে। প্রায় এক হাজার ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতিবছর কাঁচামাল আমদানি বাবদ ১৩০ কোটি ডলার বিদেশে চলে যায়।
ওষুধের কাঁচামালকে বলা হয় অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট বা এপিআই। এপিআই তৈরিতে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, কারিগরি দক্ষতা ও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন। এসব একত্র করা যে সম্ভব, তার প্রমাণ ব্যবসায়ীরা রেখেছেন। কেউ কেউ এপিআই তৈরি করে বিদেশ রপ্তানিও করেছেন। আবার দু-একটি ওষুধ কোম্পানি এপিআই তৈরি করে নিজেদের ওষুধ কোম্পানিতেই ব্যবহার করছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম জামালউদ্দীন, বিএআইএমএর নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ নিজাম উদ্দিন আহমেদ।