শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের সাজার আবেদন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ফাইল ছবি

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইনজীবীরা। ২০ নভেম্বর চারজনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শুনানির দিন ঠিক করেছেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ নিয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন তাঁরা।

মামলার শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ড. ইউনূস। তাঁর আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, হয়রানির উদ্দেশ্যে এই মামলা করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যরা লিখিতভাবে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন।  

ড. ইউনূস বাদে মামলায় অপর তিন বিবাদী হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে পারেন। এর মধ্যে ১০১ শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাঁদের স্থায়ী করা হয়নি।

শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি।
ড. ইউনূসসহ বিবাদীরা ৯ নভেম্বর আদালতের কাছে লিখিত বক্তব্যে বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান মামলাটি করেছেন।

ওই লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তা নবায়নের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের প্রকল্প নোকিয়া কেয়ার ও পল্লীফোনের কার্যক্রম তিন বছরের চুক্তি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। মেয়াদ শেষে তা নবায়ন হয়। যেহেতু গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রম চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত, তাই গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এর লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়। ফলে মূল লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিলে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারী ইউনিয়ন ওই অর্থ পাওয়ার আশায় শ্রম আদালতে মামলা করে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে মামলা চলমান। আদালত যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গত ৩০ মে ড. ইউনূসকে প্রধান আসামি করে আরও ১২ জনের নামে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। পরে গত ৫ অক্টোবর দুদকে যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। তাই আমি শঙ্কিত নই।’