বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন

মেয়ে মেহেরিমা আক্তার ও মা সামিরা আক্তার দুজনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেফাইল ছবি: প্রথম আলো

বরগুনায় গত বছরের (২০২৪) জুন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২১২। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলায় চলতি বছরের ৯ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৪৬৩ জন। গত বছর এ সময়ে যত রোগী ছিল, এবার উপকূলীয় এ জেলায় সেই তুলনায় রোগী বেড়েছে ১৬ গুণের বেশি। দেশের মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের ২৫ ভাগ এখন এই এক জেলায়। বরগুনার ডেঙ্গুর বিস্তার দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

জেলার এ পরিস্থিতিকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের’ সঙ্গে তুলনা করলেন বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দক্ষিণের এই জনপদে ঘূর্ণিঝড় প্রায় প্রতিবছর হয়। তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকে আমরা আবহাওয়ার বার্তা পাই। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। প্রস্তুতির কারণে জানমালের ক্ষতি কমে। কিন্তু এবার এই ডেঙ্গুর ঘূর্ণিঝড় এল আগাম বার্তা ছাড়া। আমাদের একেবারে পর্যুদস্ত করে দিয়েছে।’

বরগুনায় এবার ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার কি একেবারে আকস্মিক ঘটনা? তথ্য–উপাত্ত এমন কথা বলে না। গত বছর বরগুনায় ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৪৩৪ জন। দেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত জেলা ছিল বরগুনা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে সর্বোচ্চ সংক্রমণের এলাকা ছিল কক্সবাজার। এটিও উপকূলের একটি জেলা। উপকূলের জেলাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু বাড়ছে। দেশের অন্য জনপদের তুলনায় উপকূলের জেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি—এটা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে।

দক্ষিণের এই জনপদে ঘূর্ণিঝড় প্রায় প্রতিবছর হয়। তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকে আমরা আবহাওয়ার বার্তা পাই। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। প্রস্তুতির কারণে জানমালের ক্ষতি কমে। কিন্তু এবার এই ডেঙ্গুর ঘূর্ণিঝড় এল আগাম বার্তা ছাড়া। আমাদের একেবারে পর্যুদস্ত করে দিয়েছে।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ

উষ্ণায়ন, লবণাক্ততার বিস্তার, বৃষ্টিপাতের হেরফের, তাপমাত্রার পরিবর্তন—এসবের সঙ্গে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক আছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু উপকূলই নয়, পুরো বাংলাদেশের সর্বত্র ডেঙ্গুর বিস্তারের সঙ্গে এসবের সম্পর্ক উঠে এসেছে নানা গবেষণায়। জলবায়ুর পরিবর্তনের পাশাপাশি অবশ্য অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

এসব কারণে এবার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি। গত জুন মাসে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বরগুনায় এডিস মশার জরিপ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, বরগুনা পৌর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এডিস মশার লার্ভা বা শূককীটের উপস্থিতি দ্বিগুণের বেশি। ওই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, ঘরে ঘরে এখন এডিস ছড়িয়ে পড়েছে।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সঙ্গে অভিভাবক
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ চিত্র শুধু বরগুনার গ্রামে নয়, দেশের অন্যান্য গ্রামাঞ্চলেও এখন এডিস ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছর চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট, গোপালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ ছাড়া দেশের ৬০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে ইতিমধ্যে। ডেঙ্গু বর্ষার অসুখ। বর্ষা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এ সময়ে দেশে আগে এভাবে ডেঙ্গুর বিস্তার হয়নি। বৈরী প্রকৃতি ডেঙ্গুর বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

আইইডিসিআরের সাবেক মুখ্য কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অব্যবস্থাপনাকে ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ হিসেবে অবশ্যই ধরতে পারি। কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিসের বিস্তারে বৃষ্টি, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা—এই তিনের মিলিত ভূমিকা আছে। কয়েক দশক ধরে এসবের মধ্যে একধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন দেশের ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। দেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে।’

বরগুনা পৌর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এডিস মশার লার্ভা বা শূককীটের উপস্থিতি দ্বিগুণের বেশি। ওই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, ঘরে ঘরে এখন এডিস ছড়িয়ে পড়েছে।

ডেঙ্গু কী, কীভাবে ছড়ায়

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজিনত সংক্রমণ। মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিবছর আনুমানিক ১০ থেকে ৪০ কোটি মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে।

উষ্ণমণ্ডলীয় ও উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ুতে ডেঙ্গুর বিস্তার হয়। এটি মূলত নগরের অসুখ। যদিও অনেক ডেঙ্গু সংক্রমণ কোনো লক্ষণ দেখায় না বা হালকা উপসর্গ সৃষ্টি করে, তবু ভাইরাসটি মাঝেমধ্যে গুরুতর অবস্থা ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ডব্লিউএইচও বলছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে ভেক্টর (মশা) নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করে।

ডেঙ্গু প্রথম ১৯৬০-এর দশকে বাংলাদেশে শনাক্ত হয়। তখন এটি ‘ঢাকা জ্বর’ নামে পরিচিত ছিল। এরপর ২০০০ সাল থেকে দেশে ডেঙ্গুর নতুন করে প্রাদুর্ভাব হয়। মশার বিস্তার এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বিস্তৃত একটি রোগে পরিণত হয়েছে।

২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর দেশে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে এর প্রকোপ বাড়তে থাকে। তবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় ২০২৩ সালে। ওই বছর দেশের ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বলে সরকারিভাবে জানানো হয়। যা আগের ২৩ বছরে মোট আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে এককভাবে ১ হাজার ৭০৫ জন মারা যান; যা আগের বছরগুলোর মোট মৃত্যুর (৮৪৯ জন) চেয়ে বেশি।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অব্যবস্থাপনাকে ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ হিসেবে অবশ্যই ধরতে পারি। কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিসের বিস্তারে বৃষ্টি, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা—এই তিনের মিলিত ভূমিকা আছে। কয়েক দশক ধরে এসবের মধ্যে একধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন দেশের ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। দেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে।
আইইডিসিআরের সাবেক মুখ্য কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ

বৃষ্টি–তাপ–আর্দ্রতার হেরফের বনাম ডেঙ্গুর বিস্তার

মশা
ছবি: পেক্সেলস

২০১০ সাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর সঙ্গে আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের ধরন (মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত), জলাবদ্ধতা, বন্যা ও পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক লক্ষ করা গেছে। ঋতুগত এমন পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিস্থিতি ডেঙ্গু ছাড়াও ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য ভেক্টরবাহিত রোগের বিস্তারের জন্য আরও অনুকূল হয়ে উঠছে।

মাত্র এক দশক আগেও বাংলাদেশে ডেঙ্গুকে মূলত একটি মৌসুমি ও শহরকেন্দ্রিক রোগ হিসেবে দেখা হতো। বর্ষাকালে, বিশেষত ঢাকায় এটি বেড়ে যেত এবং পরে কমে আসত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গু একটি স্থায়ী জাতীয় স্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙেছে। একসময়ে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার কম হলেও এখন অনেক অঞ্চলে ফিরে এসেছে।

যুক্তরাজ্যের কেইল ইউনিভার্সিটির ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রভাষক ও বাংলাদেশি গবেষক নাজমুল হায়দার বলেন, ‘এই উদ্বেগজনক পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এডিস মশার প্রাকৃতিক জীবনচক্রকে সরাসরি প্রভাবিত করে—তাদের বেঁচে থাকার হার, কামড়ানোর পরিমাণ এবং ভাইরাস বহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।’

নাজমুল হায়দার আরও বলেন, ‘গরম আবহাওয়ায় মশার জীবাণু ছড়ানোর ক্ষমতা সময় (এক্সটার্নাল ইনকিউবেশন পিরিয়ড–ইআইপি) কমে আসে, ফলে মশা আরও দ্রুত সংক্রামক হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে বৃষ্টিপাতও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি মশার জন্য আদর্শ প্রজননস্থল তৈরি করে। এখন বর্ষার সময়চক্রে যে পরিবর্তন ঘটছে; বিশেষ করে আগাম প্রাক্‌-বর্ষা ও দীর্ঘায়িত বর্ষা-পরবর্তী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে মশার কার্যকলাপ এবং ডেঙ্গুর সংক্রমণ মৌসুমকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

এই উদ্বেগজনক পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এডিস মশার প্রাকৃতিক জীবনচক্রকে সরাসরি প্রভাবিত করে—তাদের বেঁচে থাকার হার, কামড়ানোর পরিমাণ এবং ভাইরাস বহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
যুক্তরাজ্যের কেইল ইউনিভার্সিটির ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রভাষক ও বাংলাদেশি গবেষক নাজমুল হায়দার

তাপমাত্রার হেরফের ও এডিসের বিস্তার

২০২৩ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার এবং অঞ্চলভিত্তিক চিত্রের কথা উঠে এসেছে ‘দ্য ২০২৩ ফেটাল ডেঙ্গি আউটব্রেক ইন বাংলাদেশ হাইলাইটস আ প্যারাডাইম শিফট অব জিওগ্রাফিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন কেসেস’ শীর্ষক এক গবেষণায়। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড ইনফেকশন সাময়িকীতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এটি প্রকাশিত হয়।

২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে গড় তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৪৯°সেলসিয়াস বেড়েছে। এটি সংখ্যায় সামান্য মনে হলেও এর জীববৈজ্ঞানিক প্রভাব কতটা, তা ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এই উষ্ণতা বছরে প্রায় ৪ হাজার ২৯২ অতিরিক্ত ডিগ্রি-ঘণ্টা তাপ দিয়েছে; যা কিনা মশাবাহিত রোগ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডেঙ্গু ভাইরাসের ক্ষেত্রে, একটি এডিস মশার শরীরে ভাইরাসের ইপিআই সম্পূর্ণ হতে মাত্র ৩৪৯ ডিগ্রি-ঘণ্টা তাপমাত্রা দরকার হয় (২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায়)। অতিরিক্ত এই তাপমাত্রা ইপিআই কমিয়ে দেয়। ফলে মশা আরও দ্রুত সংক্রামক হয়ে ওঠে এবং সংক্রমণের গতি ও ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পায়।

বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি প্রথম আলোকে, যদি মশা এ রকম সুষম আবহাওয়া পায়, তবে ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার সময়টা দ্রুততর হয়ে যায়। ধরা যাক, একটি মশার ডিম থেকে বাচ্চা হতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে। কিন্তু এমন আবহাওয়া পেলে তা তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে এমন আবহাওয়ার বিস্তার ঘটছে প্রায় দেড় দশক ধরে। ডেঙ্গুর বিস্তারও তাই বাড়ছে।

ওই গবেষণার একটি অনুমিত হিসাব হলো, যদি গড় তাপমাত্রা প্রতি ১°ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, বাংলাদেশে মাসিক ডেঙ্গুর সংক্রমণ ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এই প্রবণতা বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে। যেমন কম্বোডিয়ায় ১২ থেকে ২২ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ৬১ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৫ এবং মেক্সিকোতে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে।

ডেঙ্গু ভাইরাসের ক্ষেত্রে, একটি এডিস মশার শরীরে ভাইরাসের ইপিআই সম্পূর্ণ হতে মাত্র ৩৪৯ ডিগ্রি-ঘণ্টা তাপমাত্রা দরকার হয় (২৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায়)। অতিরিক্ত এই তাপমাত্রা ইপিআই কমিয়ে দেয়। ফলে মশা আরও দ্রুত সংক্রামক হয়ে ওঠে এবং সংক্রমণের গতি ও ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পায়।

ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের জন্য সর্বোত্তম তাপমাত্রা হলো ২৬°থেকে ২৯°ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা পরিসরে এডিস মশা সবচেয়ে বেশি কার্যকরভাবে বেঁচে থাকতে, কামড়াতে এবং ভাইরাস ছড়াতে পারে। বাংলাদেশের বর্ষা মৌসুম সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর—এই অনুকূল তাপমাত্রার সঙ্গে মিলে যায়। এই সময়ে উষ্ণতা ও আর্দ্রতার সমন্বয় মশার বেঁচে থাকা ও ভাইরাসের বিস্তারে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এই জলবায়ুগত অবস্থা বর্ষাকালকে ডেঙ্গুর জন্য একধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে। যেখানে মশার দ্রুত বিস্তার ও ভাইরাস সংক্রমণ সহজ হয়।

বাংলাদেশের কোন অঞ্চলের তাপমাত্রা কতটা বাড়ছে, তার চিত্র পাওয়া যায় বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক গবেষণায়। ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক গবেষণাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ও নরওয়ের আরও পাঁচজন আবহাওয়াবিশেষজ্ঞ। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর ধরে এই গবেষণা হয়েছে।

দেশে আবহাওয়া অধিদপ্তরের যতগুলো কেন্দ্র (কার্যালয় বা স্টেশন) আছে, সেখান থেকে এই গবেষণার তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার দশকের বেশি সময়ের আবহাওয়ার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণে আমরা নানা ধরনের পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি। এর মধ্যে আছে তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের ধরন, সূর্যালোক ও মেঘের প্রবণতার পরিবর্তন।’

গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার তাপমাত্রার ক্ষেত্রে ৪০ বছরে দেখা গেছে প্রাক্‌-বর্ষা, বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী তিন সময়েই প্রতি দশকেই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৯, শূন্য দশমিক ৩৩ এবং শূন্য দশমিক ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।

খরাপ্রবণ রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রতি দশকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে—শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে। বৃষ্টিবহুল সিলেটেও প্রায় একই মাত্রায় তাপমাত্রা বেড়েছে। ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগে প্রতি দশকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে।

গত চার দশকে আবহাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন হয়েছে, তাতে ডেঙ্গুর মতো কীটপতঙ্গবাহিত নানা রোগ দেশে বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমদ।

চার দশকের বেশি সময়ের আবহাওয়ার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণে আমরা নানা ধরনের পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি। এর মধ্যে আছে তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের ধরন, সূর্যালোক ও মেঘের প্রবণতার পরিবর্তন।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ

বৃষ্টিপাতে হেরফের, ডেঙ্গুর বিস্তার

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড একাডেমিকের জার্নাল অব মেডিকেল এনটমোলজিতে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়, ‘টু ডিকেডস অব এনডেমিক ডেঙ্গি ইন বাংলাদেশ (২০০০–২০২২): ট্রেন্ডস, সিসোনালিটি অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট অব টেম্পারেচার অ্যান্ড রেইনফল প্যাটার্নস অন ট্রান্সমিশন ডায়নামিকস’ শীর্ষক গবেষণাটি। সেখানে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তারের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে।

তাপমাত্রার পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের ধরনও ডেঙ্গুর বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে গত দুই দশকে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত কমেছে।

গবেষণায় বলা হয়, ২০০০-২০১০ সালে যেখানে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২ হাজার ৭৯ মিলিমিটার। তা ২০১১-২০২২ সালে কমে এসেছে ১ হাজার ৭৬৫ মিলিমিটারে। তবে বর্ষার মৌসুমগত প্যাটার্ন পরিবর্তিত হয়েছে। জুলাই থেকে অক্টোবরের মূল বর্ষার মাসগুলোতে বৃষ্টিপাত কমেছে, কিন্তু প্রাক্‌-বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী মাসগুলোতে বেড়েছে। এর ফলে মশার প্রজনন মৌসুম আগেভাগেই শুরু হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাদুর্ভাব শুরুর এক-দুই মাস আগের বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সংক্রমণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পর্কিত।

বৃষ্টিপাতের প্রভাব দ্বিমুখী। একদিকে অতিরিক্ত ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত জমে থাকা পানির মাধ্যমে মশার জন্য প্রজননস্থল তৈরি করে। অন্যদিকে খরা বা পানির ঘাটতির সময় মানুষ ঘরে পানি জমিয়ে রাখে বালতি, ট্যাংক, ড্রাম ইত্যাদিতে; যেগুলোর অনেকটাই খোলা অবস্থায় থাকে। আবার এগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণও হয় না। এই জমা পানি মশার অনিচ্ছাকৃত প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়। এর বড় উদাহরণ দেখা গেছে এ বছরের চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে। দেশে এখন পর্যন্ত ২৫ ভাগের বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছেন বরগুনায়। এই উপকূলীয় জেলায় টিউবওয়েলের পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা ও লৌহ থাকায় বহু পরিবার বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখে। এই প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষণই এখন মশার বিস্তারের জন্য একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির জন্য উপকূলের অনেক মানুষের ভরসার স্থল বৃষ্টির পানি। এ পানি মটকা বা প্লাস্টিকের বড় ড্রামে করে ভরে রাখা হয় শুকনো মৌসুমে ব্যবহারের জন্য। আর এ পানিতে ডেঙ্গু ছড়ানো এডিসের বিস্তার ঘটছে।

লবণাক্ততা ও পানির সংকট বনাম এডিসের বংশবৃদ্ধি

বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৮ দশমিক ৬ লাখ হেক্টর উপকূলীয় এলাকার মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশ এলাকা বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততা–কবলিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের গবেষণাতেও। ‘রিভার স্যালাইনিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ এভিডেন্স ফ্রম কোস্টাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে উপকূলীয় ১৯ জেলার ১৪৮টি উপজেলায় মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততায় আক্রান্ত হবে ১০ নতুন এলাকা। উপজেলাগুলো হলো সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ; খুলনার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, কয়রা, পাইকগাছা; বাগেরহাটের মোংলা এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা। এসব উপজেলায় এখন ১০ পিপিটি মাত্রার লবণাক্ততা বিরাজ করছে। ২০৫০ সালের মধ্যে কোনো কোনো স্থানে তা ১৫ থেকে ২৫ মাত্রায় উন্নীত হতে পারে।

লবণাক্ততার কারণে সুপেয় পানির জন্য উপকূলের অনেক মানুষের ভরসার স্থল বৃষ্টির পানি। এ পানি মটকা বা প্লাস্টিকের বড় ড্রামে করে ভরে রাখা হয় শুকনো মৌসুমে ব্যবহারের জন্য। আর এ পানিতে ডেঙ্গু ছড়ানো এডিসের বিস্তার ঘটছে।

গত বছরের নভেম্বর মাসে আইইডিসিআরের একটি দল বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এডিসের জরিপ করে। জরিপে থাকা এক গবেষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, বরগুনার গ্রামাঞ্চলে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার বড় পাত্রগুলোতে এডিসের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। পানির প্রাপ্যতার অভাব এডিসের বংশবিস্তারে এভাবে ভূমিকা রাখছে।’

শুধু এই বরগুনাতেই নয়, ২০২৩ সালে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে এডিস মশার জরিপে দেখা যায়, যে ওয়ার্ডগুলোতে পানির সংকট বেশি, সেখানে এভাবে ধরে রাখা পানিতে এডিসের বিস্তার বেশি।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইডের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান খায়রুল ইসলাম বলছিলেন, ‘এডিসের বিস্তারের সঙ্গে পানির সংকটের একটা সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। এটা ডেঙ্গু বিস্তারের ক্ষেত্রে নতুন ধারণার সৃষ্টি করেছে। এই পানিসংকটের সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ভূমিকা অগ্রাহ্য করা যায় না।’

উপকূলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি

এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তারের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভাগ, যেমন খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর হার উত্তরাঞ্চলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। দক্ষিণে প্রতি ১০০০ জনে ২ দশমিক ৩০ জন সংক্রমিত হলেও উত্তরে তা ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৫০। মৃত্যু হারেও পার্থক্য দেখা যায়। দক্ষিণে মৃত্যু শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ আর উত্তরে শূন্য দশমিক ১৩।

গবেষক নাজমুল হায়দার বলেন, এর একটি বড় কারণ হচ্ছে তাপমাত্রা। ২০২৩ সালে দক্ষিণাঞ্চলে গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ৪৬°ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা উত্তরাঞ্চলের তুলনায় প্রায় ১ ডিগ্রি বেশি। এই তাপমাত্রাগত সুবিধা মশার জীবনচক্র ও ভাইরাস বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

ডেঙ্গু আমাদের জন্য পুরোনো রোগ হলেও আমরা এ থেকে কিছু শিখছি না। চেষ্টাও করছি না যথাযথভাবে। তাই একে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন

ডেঙ্গু রোধে ব্যর্থতায় অন্য দায়ও আছে

ডেঙ্গু এখন শুধু উষ্ণমণ্ডলীয় দেশের অসুখ নয়; বিশ্বের শীতপ্রধান দেশেও এর বিস্তার ঘটছে। ইতিমধ্যে ইতালি, জার্মানিসহ নানা দেশে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। হিমালয়ের কোলে থাকা নেপালেও ডেঙ্গুর বিস্তার দেখা গেছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু বিস্তারে তাপমাত্রা ও বৃষ্টির হেরফের একটা ভূমিকা রাখছে তা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এ কথাও সত্য, উপমহাদেশের অনেক দেশেই ডেঙ্গুর বিস্তার হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে কিন্তু বাংলাদেশে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ কি শুধুই জলবায়ু পরিবর্তন?

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ডেঙ্গু বিস্তারে ভূমিকা রাখছে, এটা ঠিক। এটা বৈশ্বিক বাস্তবতা। কিন্তু শুধু একেই একমাত্র কারণ বলার কোনো অবকাশ নেই। ডেঙ্গুর ব্যবস্থাপনায় আমরা কোনো কাঠামো আজও তৈরি করতে পারিনি। এর গুরুত্বও বুঝতে পারিনি।
কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার

বাংলাদেশের পাশে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার কথাই ধরা যাক। সেখানেও বাংলাদেশের কাছাকাছি সময়েই ডেঙ্গুর বড় প্রাদুর্ভাব হয়। কিন্তু কলকাতায় ডেঙ্গু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশের থেকে পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতার প্রকৃতিতে বড় ভিন্নতা নেই। এরপরও সেখানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাফল্য এসেছে মূলত উন্নততর ব্যবস্থাপনার কারণে, এমনটাই মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু আমাদের জন্য পুরোনো রোগ হলেও আমরা এ থেকে কিছু শিখছি না। চেষ্টাও করছি না যথাযথভাবে। তাই একে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।’

তাই ডেঙ্গুর বিস্তারে এ রোগ এবং মশার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এর সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকারের সক্রিয়তা, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ডেঙ্গু বিস্তারে ভূমিকা রাখছে, এটা ঠিক। এটা বৈশ্বিক বাস্তবতা। কিন্তু শুধু একেই একমাত্র কারণ বলার কোনো অবকাশ নেই। ডেঙ্গুর ব্যবস্থাপনায় আমরা কোনো কাঠামো আজও তৈরি করতে পারিনি। এর গুরুত্বও বুঝতে পারিনি। অথচ এটা এখন সারা দেশের সারা বছরের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেঙ্গু একসময় স্থানীয় এবং স্বল্পকালীন সমস্যা ছিল, এখন তা দীর্ঘমেয়াদি ও জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’