বাঘ হত্যা জামিন অযোগ্য অপরাধ: পরিবেশমন্ত্রী
সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় সরকারের একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেছেন, আইনে বাঘ হত্যা জামিন অযোগ অপরাধ। সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য তাঁর মন্ত্রণালয় তিন বছর মেয়াদি ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবন সংরক্ষণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আজ শুক্রবার বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে বন অধিদপ্তরে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন মন্ত্রী।
সরকারের প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে তৃতীয়বারের মতো ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘের জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাঘের শিকার প্রাণী হরিণ ও শূকরের সংখ্যা গণনা, সুন্দরবনের লোকালয়–সংলগ্ন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের ফেন্সিং বা বেষ্টনী তৈরিসহ বাঘ সংরক্ষণ ও গবেষণা–সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে।
বনমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘসমৃদ্ধ ১৩টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার জন্য তৈরি ঘোষণাপত্রের আলোকে প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব বাঘ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’।
মন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ ২০১৭-১৮ সালে পরিচালিত জরিপের তথ্যানুযায়ী, ‘আমাদের সুন্দরবন অংশে রয়েছে ১১৪টি বেঙ্গল টাইগার এবং ২০২০-২১ সালের জরিপ অনুসারে ভারতের সুন্দরবন অংশে আছে প্রায় ৯৬টি বাঘ। আইইউসিএন গ্লোবাল স্পিশিজ রেড লিস্ট-২০২০ অনুসারে, বিশ্বে বাঘের সংখ্যা অনুমানিক ৪ হাজার ৪৮৫। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সারা বিশ্বে বন উজাড় ও অবৈধ শিকারের ফলে বেঙ্গল টাইগার বিশ্বে “বিপণ্ন’’ প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন প্রমুখ।
মন্ত্রী বলেন, বাঘ হত্যাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) প্রণয়ন করা হয়েছে। বাঘের অবাধ বিচরণ ও বংশবিস্তারের লক্ষ্যে সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বনমন্ত্রী জানান, সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে স্মার্ট প্যাট্রলিং পদ্ধতি ও ড্রোনপ্রযুক্তির মাধ্যমে বাঘসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর শিকার, পাচার ও নিধন বন্ধের কার্যক্রম চলমান। ‘অপরাধ উদ্ঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার প্রদান বিধিমালা, ২০২০’ জারি করা হয়েছে। এ বিধিমালায়, বাঘের ক্ষেত্রে, বনাঞ্চলের ভেতরে অপরাধী ধৃত হলে প্রদত্ত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং বনাঞ্চলের বাইরে ধৃত হলে প্রদত্ত তথ্যের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক পুরস্কারের বিধান রাখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাকিবুল আমিন এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার। বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান এম মনিরুল এইচ খান এবং বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে।