ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়। রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর এবং সম্পত্তি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এ কথা বলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি এই বিবৃতি দিয়েছেন।

‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করেছেন’ শীর্ষক বিবৃতিতে আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অধিবেশনে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব উপস্থাপন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এইচআরডব্লিউ মনে করে, বাংলাদেশের ন্যায়বিচার দেখতে আগ্রহী জনগণের জাতিসংঘ-সমর্থিত প্রক্রিয়াকে (মেকানিজম) সমর্থন করা উচিত, যা সহিংসতা ও প্রতিশোধের বদলে একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করবে।

আরও পড়ুন

বিবৃতি বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। তাঁর কিছু আত্মীয়স্বজনের মালিকানাধীন সম্পত্তি ধ্বংস করেছেন। তাঁর দলের কিছু নেতার ঘরবাড়িও নিশানা করা হয়েছে। এই হামলাকে তথাকথিত ‘বুলডোজার শোভাযাত্রা’ বলা হচ্ছে। ঘোষণা দিয়েই এই হামলা চালানো হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত সম্পত্তি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

ছয় মাস আগে ২০২৪ সালের আগস্টে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং জোরপূর্বক গুমসহ ১৫ বছরের দমন-পীড়নের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে অন্যায্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ছিল। তাঁর সরকার গণ-অভ্যুত্থানে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ দমনে চেষ্টা করে, ফলে ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।

আরও পড়ুন

এসব কারণে আওয়ামী লীগের সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, তা ন্যায্য হলেও আইনের লঙ্ঘন ন্যায্য নয়। বাংলাদেশের আবারও মারাত্মক দমন-পীড়নের দিকে ঝুঁকে পড়া উচিত নয়।

গত বুধবার ৩২ নম্বরে হামলা প্রসঙ্গে এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়, এমন সময়ে ভাঙচুর হলো, যখন হাসিনা তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে অনলাইনে ভাষণ দিচ্ছিলেন এবং হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের দাবি জোরালো হচ্ছে। কিন্তু হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার আগে ভারত সরকারকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে প্রত্যর্পণের ঝুঁকি খতিয়ে দেখতে হবে।

বর্তমান সরকারের সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে বলা হয়, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। এই সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির জবাবদিহির বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে ইউনূসের প্রশাসন ক্ষুব্ধ নাগরিকদের দিক থেকে নানা চাপের মুখে রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী বা গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারের বিক্ষোভের মতো চাপও রয়েছে। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তবে এই সরকার এখনো সংখ্যালঘু বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিশেষ করে আতঙ্কে থাকা হিন্দুদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। আগের সরকারের আমলে বেআইনিভাবে বিরোধী মতের মানুষকে আটক রাখার স্থানগুলো পরিদর্শনে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং প্রমাণ ধ্বংস করা হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়ে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনূস সরকারের উচিত মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অধিবেশনে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব উত্থাপন করা, যাতে করে কারিগরি সহায়তা, অধিকতর তদন্ত এবং জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন তৈরির অনুরোধ করা। এতে আগের সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত ইতিবাচক মানবাধিকার পদক্ষেপগুলোর স্বীকৃতি থাকা উচিত।