টেকসই বিশ্বের জন্য প্রকৌশলগত সমাধানে প্রয়োজন ‘জিআইএ মডেল’ অনুসরণ

আজ ৪ মার্চ ২০২৪ ‘বিশ্ব প্রকৌশল দিবস’। দিবসটি উপলক্ষে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ ও প্রথম আলো ডটকমের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহযোগিতায় আয়োজন করা হয় বিশেষ প্যানেল আলোচনা। বুয়েটের কাউন্সিল ভবনের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও নির্মাণসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশাজীবীরা। বিশ্ব প্রকৌশল দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই বিশ্বের জন্য প্রকৌশলগত সমাধান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচকদের বক্তব্য প্রকাশিত হলো সংক্ষিপ্ত আকারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাউন্সিল ভবন মিলনায়তনে বিশেষ প্যানেল আলোচনায় অতিথিরা। ঢাকা, ৪ মার্চছবি: সংগৃহীত

উদ্বোধন করেন

সত্য প্রসাদ মজুমদার: উপাচার্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

আলোচনায় অংশ নেন

অমিত আগারওয়াল: কমার্শিয়াল ডিরেক্টর, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড

আবদুল জব্বার খান: উপ-উপাচার্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

মো. আলি আখতার হোসেন: প্রধান প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)

মো. আশরাফুল ইসলাম: প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)

মেরিনা তাবাশ্যুম: প্রতিষ্ঠাতা, এমটিএ এবং অধ্যাপক, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি ডেলফ্ট, নেদারল্যান্ডস

তানভিরুল হক প্রবাল: সাবেক সভাপতি, রিহ্যাব এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিল্ডিং ফর ফিউচার

সঞ্চালক

মুনির হাসান: প্রধান সমন্বয়ক, যুব কার্যক্রম, প্রথম আলো

আলোচনার অংশবিশেষ

মুনির হাসান

মুনির হাসান: ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশনের (WFEO) প্রস্তাবানুসারে ইউনেসকো ৪ মার্চকে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য বিশ্ব প্রকৌশলী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। দিনটি আমাদের আধুনিক বিশ্বে প্রকৌশল এবং প্রকৌশলীর অর্জনগুলোকে হাইলাইট করার এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি কীভাবে আধুনিক জীবন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীভূত, তা জনসাধারণকে বোঝার একটি সুযোগ করে দেয়। এ আয়োজনে সৌভাগ্যক্রমে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদারকে। টেকসই বিশ্বের জন্য প্রকৌশলগত সমাধান বিষয়ে প্রথমেই স্যারের মতামত শুনতে চাই।

সত্য প্রসাদ মজুমদার

সত্য প্রসাদ মজুমদার: প্রকৌশলগত সমাধান নির্ভর করে স্থায়িত্বের ওপর। আগে মনে করা হতো, একটা বিল্ডিং নির্মাণের জন্য শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং হলেই চলে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেখানে আর্কিটেকচারাল, কেমিক্যাল, ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, মেকানিক্যাল, এনভায়রনমেন্টালসহ অন্য সব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রয়োজন হয়। সুতরাং টেকসই বিশ্বের জন্য প্রকৌশলগত সমাধানের জন্য প্রথমত দরকার মানসম্মত নির্মাণসামগ্রী, যা লাফার্জহোলসিম কয়েক যুগ থেকে থেকে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নকে টেকসই করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাকাডেমিগুলো শুধু যৌথ কাজ করলে হবে না। এর সঙ্গে বিল্ডিং কোডিং, ওয়্যারিং, পাইলিং, ইন্টারনেট সংযোগ, এআই, কম্পিউটার সায়েন্সসহ নানা কিছু সম্পর্কযুক্ত। সবার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে যখন নিজেদের দক্ষতা এবং জ্ঞান কাজে লাগানো হবে তখনই একটি টেকসই বিশ্বের জন্য প্রকৌশলগত সমাধান পাওয়া যাবে।

অমিত আগারওয়াল

অমিত আগারওয়াল: লাফার্জহোলসিম প্রায় ২০০ বছর ধরে বিল্ডিং সলিউশন সেবা দিয়ে আসছে। আমরা সব সময় যুগের চাহিদা অনুযায়ী ম্যাটেরিয়াল ডিজাইন করি। বিশ্বজুড়ে আমরা সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে আমাদেরই একমাত্র ইন্টিগ্রেটেড সিমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে। লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রোডাক্টগুলো অন্যান্য সিমেন্টের চেয়ে ৩৫ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ করছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে, ভবিষ্যতে যেসব প্রোডাক্ট আমরা বাজারজাত করব, সবগুলোর কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কম থাকবে। পরিবেশ রক্ষায় বর্তমানে বাংলাদেশে একমাত্র লাফার্জহোলসিমই ওয়েস্ট কো-প্রসেসিং করছে। লাফার্জহোলসিমের জিয়োসাইকেল প্রোজেক্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট, মিউনিসিপ্যালটি ওয়েস্ট প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করছে। আমরা কিছুদিন আগে বাড়ি নির্মাণে লাল ইটের বিকল্প হোলসিম ব্লক্স লঞ্চ করেছি, যা পোড়ামাটির লাল ইট থেকে অনেকাংশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সাহায্য করবে। লাফার্জহোলসিম টেকসই বিশ্বের জন্য বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস বিষয়ক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি অ্যাডভোকেসিও করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এ প্যানেল আলোচনা। কারণ অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে লজিক্যাল আলোচনা নীতি নির্ধারকদের কাছে সুপারিশ আকারে তুলে ধরা যায়।

আবদুল জব্বার খান

আবদুল জব্বার খান: আগামীর ইঞ্জিনিয়ারদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ করছে বুয়েট। গ্রিন বিল্ডিং ইনিশিয়েটিভস এবং সাসটেইনেবল কনস্ট্রাকশন নিশ্চিতে ভবিষ্যৎ প্রকৌশলী-লিডার তৈরিতে আমরা ইকো লাইভ নিয়ে কাজ করছি। গত তিন বছর ক্যাপেস্টোন প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে পারদর্শী করে তোলা হচ্ছে। যা তাঁদের স্নাতক শেষ করার আগেই করা হচ্ছে। সুতরাং টেকসই উন্নয়ন করতে হলে ইন্ডাস্ট্রি এবং সংশ্লিষ্ট অ্যাকাডেমিকে পরস্পর সহযোগিতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বর্তমানে প্রায় ৬২টি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে নানামুখী গবেষণা ও ট্রেনিং বিষয়ক কাজ করছে বুয়েট। পাশাপাশি বুয়েট বিভিন্ন কোম্পানির আগ্রহের সঙ্গে সহমত পোষণ করে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা এবং কনসালটেন্সিও করছে। যা আমাদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সফট স্কিলও বৃদ্ধি করছে।

এ ছাড়া লো-কার্বন এবং এনার্জি-এফিশিয়েন্ট বিল্ডিং সলিউশনের নীতি পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডসহ সরকারি সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে কাজ করছে বুয়েট। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা এ ব্যাপারে মডুলা কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে কাজ করছি। যা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।

আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো মন্ত্রণালয় বা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ প্রকল্পের’ মাধ্যমে আমাদের ‘জিআইএ মডেল’ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ গভর্নমেন্ট-ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমি—এই তিনটির সমন্বয়ে যখন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে তখনই সেটাকে আমরা প্রকৌশলগত সমাধান বলতে পারব। আর এর মাধ্যমেই টেকসই বিশ্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

মো. আলি আখতার হোসেন

মো. আলি আখতার হোসেন: টেকসই উন্নয়নে আমাদের এলজিইডি কাঁচা-পাকা মিলে ৩ লাখ ৫০ হাজার রাস্তা তৈরি করছি। যার মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার পেমেন্ট হয়েছে। যেখানে আমরা তৈরি করছি মার্কেটিং ফ্যাসিলিটি এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোও। পাশাপাশি সারা দেশে ৬০ লাখ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট করেছি। প্রকল্পকে টেকসইভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়—সময়, কার্যক্রম ও রিসোর্স। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ও বাস্তবায়নকারী—পরস্পরের মধ্যে যোগসাজশ থাকতে হবে।

কিন্তু আমার মনে হয়, প্রকল্প সম্পর্কিত নির্দেশনাগুলোতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয় না এবং কিছু প্রকল্প পরিচালক পুরো প্রকল্প সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। কিন্তু জানা উচিত। না হলে বাংলাদেশের মতো জায়গায় প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা কষ্টকর হয়ে যাবে। সুতরাং একটি টেকসই বিশ্ব যদি আমরা প্রকৌশলগত সমাধানের মাধ্যমে করতে চাই, তাহলে সিমেন্ট-ইট-ডিজাইনার-ইঞ্জিনিয়ার-কনট্রাকটর সবার মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য একটি পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারব।

আমি অস্ট্রেলিয়াতে দেখেছি, তাঁরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবকিছুকে সহজ করে ফেলছে। যেখানে ৩০ মিটারের কম্পোজিট গার্ডার ১০-১২ জন শ্রমিক ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে পারছে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রযুক্তির সেই উদ্ভাবনগুলো হচ্ছে না, সেকেলে ডিজাইন নিয়েই পড়ে আছি। আমাদের সবকিছু আছে কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ নেই। তাই আমাদের প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হতে হবে।

মো. আলি আখতার হোসেন

মো. আশরাফুল ইসলাম: টেকসই ও বাসযোগ্য রাজধানীকে ঢেলে সাজাতে মাস্টারপ্ল্যান করেছি আমরা। তার অংশ হিসেবে প্রথমে আমরা স্পেস ম্যানেজমেন্টের ওপর জোর দিয়েছি। পৃথিবীর বহু দেশে গাইডেড ডেভেলপমেন্ট হয়। তারা একটা অবকাঠামোগত ডেভেলপমেন্টকে গাইড করে, সেটার মধ্যেই উন্নয়নটাকে প্রমোট করে। কিন্তু আমাদের দেশে হয় বিপরীত। আগে ডেভেলপমেন্ট হয় তারপর সেই অবকাঠামোগত উন্নয়নকে গাইড করে। যেমন ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য ছয়টি এমআরটি লাইনের জন্য ডিপোর জায়গা সংকট হয়। কারণ ডিপোর জন্য ৬০ হেক্টর জায়গার দরকার। এ জন্যই সমালোচনা শুনতে হচ্ছে, মেট্রোরেল ফুটপাতে স্টেশন বানিয়ে সেখান থেকে যাত্রী তুলছে। সমস্যা একই—পর্যাপ্ত জায়গার সংকট।

একই সমস্যা ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রেও। ৮৮ সালের বন্যার পর পানি নামার জন্য ২০ শতাংশ জায়গা সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব হয়েছিল। যা পরবর্তীতে অজানা কারণে ৮ শতাংশ হয়ে গেছে। এটাও একটা চ্যালেঞ্জ। ঢাকার ফুসফুসখ্যাত হাতিরঝিলের মাধ্যমে জলাবদ্ধতাকে যেমন আটকানো যাচ্ছে, আবার পানি নিয়েও গবেষণা করা যাচ্ছে। এ জন্য ড্যাপ থেকে ৫৫টি জলকেন্দ্রিক বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।

বর্তমানে ঢাকাকে ঢেলে সাজাতে প্রণীত ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) আমরা মেগা প্রকল্পগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। যেমন ঢাকায় ৪০ শতাংশ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করে। তাই এই পরিকল্পনায় আমরা ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার জায়গা পায়ে হাঁটা ও বাইসাইকেলে চলার জন্য সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া ঢাকা শহরে ৬ শতাংশ রোড স্পেস আছে। তাই স্পেসের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এ জন্য ঢাকাতে ড্যাপ থেকে বিশ্বের অন্যান্য শহরের মতো তিনটি রিং রোডের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকার কার্যকরী উদ্যোগ নিচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি পাবলিক স্পেসের জন্য সুপারিশ করা হয়েছ, যাতে তরুণ প্রজন্ম ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি আসক্ত না হয়। পাশাপাশি ঢাকার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে, সরকারি খাস জমিগুলোতে যেন ৫৫টি পুকুর এবং পাবলিক স্পেস করা হয়।

তাই, বাসযোগ্য রাজধানী গড়তে হলে শুধু বিল্ডিং নির্মাণে যত্নবান হলেই চলবে না, একই সঙ্গে শহরে সবুজের পরিমাণও বাড়াতে হবে।

মেরিনা তাবাশ্যুম

মেরিনা তাবাশ্যুম: বর্তমানে যে যুগটা চলছে, এটাকে বলা হচ্ছে ‘পোস্ট ফসিল ফুয়েল’ যুগ। সারা পৃথিবীতে এর ওপর থেকে নির্ভরতা কমানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। এটা কমাতে পারলে আমরা একটি পরিবেশবান্ধব পৃথিবী পাব। না কমাতে পারলে ‘জলবায়ু সংকট’ ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকবে। তাই এ সমাধানটা প্রকৌশল গতভাবেই হতে হবে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, অর্থনৈতিক-প্রাকৃতিক কারণে অনেক মানুষ বাসস্থানহীন হয়ে পড়ে। তাই আমার কাছে মনে হয়, সল্যুউশনটা এমন হতে হবে যে—আমি যদি কোথাও মুভ করি, সঙ্গে করে আমার বাড়িটাও নিয়ে যেতে পারব। ওইরকম একটা ‘ছোট স্কেলে টেন বাই টেন’ সমাধান বের করতে হবে। আরেকটি হচ্ছে, বিল্ডিং নির্মাণটা হাইব্রিড সিস্টেমে হতে হবে। যেটি শুধু স্থলে নয়, পানিতেও থাকতে পারবে।

আর এটা মনে রাখতে হবে, বিশ্বজুড়ে এখন স্থিতিশীল ও পরিবেশবান্ধব স্থাপত্যের প্রয়োজন আগের চেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই ডিজাইন করার সময় একজন স্থাপত্যবিদকে অবশ্যই পরিবেশ, জলবায়ু এবং স্থানীয় ঐতিহ্য মাথায় রাখতে হবে।

তানভিরুল হক প্রবাল

তানভিরুল হক প্রবাল: রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সু-পরিকল্পিত ও টেকসই নগরায়ণ করার ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছে। ১৫ বছর আগে দায়িত্বে থাকাকালীন আমি অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ভূমিকম্পসহ বিল্ডিং কোডের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশিক্ষণ-গোলটেবিল অনেক কিছু করেছি। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। কারণ হিসেবে আমার মনে হয়, রিহ্যাবের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ারের চাইতে ব্যবসায়ীরা চলে এসেছে। তাই এসব বিষয়ে নিয়ে তারা ভাবছেন না।

আমার মতে, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮’-এর পরিমার্জন প্রয়োজন। কারণ ১৮ মাসের বেশি প্রকল্প গেলে সেখানে বাজেট বৃদ্ধির কথা বলা আছে। যা বিদেশি কনট্রাকটরা পেলেও বাংলাদেশি কনট্রাকটরা পান না। সুতরাং এর যথাযথ প্রয়োগ এবং ইঞ্জিনিয়ার ও কনট্রাকটর—উভয়ের জন্যই গাইডলাইন করা প্রয়োজন।

তবে শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে খুলনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর এবং সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। যেখানে চোখে পড়ার মতো উঁচু ভবনও তৈরি শুরু হয়েছে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান সঞ্চালক। আলোচক ও অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।

আলোচনায় প্রাপ্ত সুপারিশ

  • গবেষণা ও উন্নয়ন—দুটিই একই গতিতে চলতে হবে

  • ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে

  • নির্মাণ-সংশ্লিষ্টদের শুধু সিভিল নয়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সব বিষয় বিবেচনায় রেখে সমাধান খুঁজতে হবে

  • জিরো কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে কীভাবে ইট উৎপাদন করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে

  • অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে নীতি নির্ধারকদের কাছে প্রকৌশলগত সুপারিশগুলো তুলে ধরতে হবে

  • ‘জিআইএ মডেল’ বা ‘গভর্নমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যাকাডেমি’র সমন্বয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে

  • যুগের প্রয়োজনে প্রযুক্তির ব্যবহারকে ইতিবাচক চর্চায় আনতে হবে

  • অবকাঠামোগত উন্নয়ন-প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় স্পেস ম্যানেজমেন্ট ও গাইডেড ডেভেলপমেন্ট করতে হবে

  • পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮-এর কিছু বিধান পুনরায় বিবেচনা করতে হবে

* (অনুলিখন: তারেক মাহমুদ নিজামী)

* গোলটেবিল আলোচনার সম্পূর্ণ ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন