ক্লিন্টন বি সিলির বরিশালের অভিজ্ঞতা নিয়ে বইয়ের প্রকাশনা উৎসব
ষাটের দশকের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন মার্কিন তরুণ ক্লিন্টন বি সিলি। এরপর তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। জীবনানন্দপ্রেমী এই ভিনদেশি গবেষকের পিএইচডির অভিসন্দর্ভও ছিল বরিশালের এই কবিকে নিয়ে।
এবার ক্লিন্টন বি সিলির লেখা আরেকটি বই ‘বরিশাল অ্যান্ড বিয়ন্ড: এসেজ্ অন বাংলা লিটারেচার’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গ্রিন রোডে দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) প্রধান কার্যালয়ে বইটির প্রকাশনা উৎসব হয়। ইউপিএলের প্রকাশিত ৩২৩ পৃষ্ঠার এ বইয়ে ১৩টি অধ্যায়ে লেখকের বরিশালের অভিজ্ঞতা এবং বাংলা সাহিত্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনার বিশ্লেষণ সংকলিত হয়েছে।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন বইটির লেখক ও শিকাগো ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ক্লিন্টন বি সিলি। তিনি বলেন, পরিচয়ের রাজনীতির বিষয়টি আলোচনার এখন যথোপযুক্ত সময়। কারণ, এখন এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রে দেশটিকে দেখা হয় সাদাদের দেশ, পুরুষদের দেশ হিসেবে। কে সত্যিকার অর্থে আমেরিকান, এটি ভয়ানক জটিল হয়ে উঠেছে। জাতিগত বা সাংস্কৃতিকভাবে আমেরিকানদের আলাদা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। তিনি বলেন, ‘আমি আইডেন্টিটি পলিটিকসের (পরিচয়ের রাজনীতি) বিরুদ্ধে। আমাদের নিজেদের তথাকথিত যে ভাষা, তা থেকেও আমরা বহিরাগত। বাইরে থেকে এসে একটা ভাষা যে শেখে, সে ভাষার কঙ্কাল দেখতে পায়। লেখক ক্লিন্টন বি সিলির বাংলায় এই মিলটা দেখতে পাই।...লেখা ও পড়ার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার গুণ ক্লিন্টন সিলির আছে। আমার একটু হিংসা হয়,...আমি যদি ওভাবে শিখতে পারতাম!’
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকারও কলকাতা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন এই অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘ক্লিন্টন বি সিলি বিদেশি হওয়াটাও বাঙালিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাঙালিদের চোখে যেসব কিছু ধরা পড়ে না, ক্লিন্টনের চোখে সেটা ধরা পড়েছে। আমেরিকান হয়ে বাঙালির মতো লিখবে, এটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।’
ক্লিন্টন বি সিলিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বা এ ধরনের কোনো সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব তুলে ধরেন ভ্রমণবিষয়ক লেখক ও অনুবাদক ফারুক মঈনউদ্দীন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্লিন্টন বি সিলির পরিচিতি তুলে ধরেন তাঁরই ছাত্র এবং এ বই নিয়ে তাঁর সঙ্গে কাজ করা সাঈদ চৌধুরী।
আলোচনার শুরুতে অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্রুখ মহিউদ্দীন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজি ও আধুনিক ভাষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নাজিয়া মনজুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্য প্রয়াত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।