বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত তোয়াব খান

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তোয়াব খানকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়
ছবি: সাজিদ হোসেন

রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খান। আজ সোমবার বাদ আসর সেখানে মেয়ে এষা খানের কবরে দাফন করা হয় তাঁকে। এ সময় তোয়াব খানের স্ত্রী হাজরা খান, মেয়ে তানিয়া খান, ছোট ভাই ওবায়দুল কবির, ভাগনে সেলিম খান, ফুফাতো ভাই অভিনেতা তারিক আনাম খানসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বাদ আসর গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শেষবারের মতো তোয়াব খানের জানাজা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁওয়ে দৈনিক বাংলার কার্যালয়ে তাঁর জানাজা হয়। পরে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার (রাষ্ট্রীয় সম্মান) জানানো হয়।

এরপর তোয়াব খানের কফিন নেওয়া হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে জানাজা শেষে তোয়াব খানের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় তোয়াব খান বাংলাদেশের বস্তুনিষ্ঠ ও সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ছিলেন। এ সময় ফুল দিয়ে তোয়াব খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, তোয়াব খানের হাত ধরে বাংলাদেশের বহু প্রথিতযশা সাংবাদিক উঠে এসেছেন। তাঁর মৃত্যু শুধু বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জগতের জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সম্পাদক মতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তোয়াব খান সংবাদকর্মী, সম্পাদক হিসেবে এবং কখনো কখনো সরকারি উচ্চপদে ছিলেন। তবে আজীবন চিন্তা ও মননে সক্রিয় সাংবাদিক ছিলেন। একজন সক্রিয়, উদ্যোগী সাংবাদিক ও সম্পাদক ছিলেন। তাঁর সততা ও নিষ্ঠা ছিল। এ রকম খুব কম দেখা যায়। তিনি আজীবন বামপন্থার চিন্তাধারার সমর্থক হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। তিনি তাঁর কর্মের জন্যই বেঁচে থাকবেন।

মতিউর রহমান বলেন,  ‘তোয়াব খানকে একজন আইডল হিসেবে জাতি সব সময় মনে রাখবে।’

তোয়াব খানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা তোয়াব খানের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বার্ধক্যজনিত জটিলতায় অসুস্থতার জন্য গত ১৯ সেপ্টেম্বর তোয়াব খানকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তাঁর বড় মেয়ে তানিয়া খান দেশে ফেরার পর আজ তাঁর জানাজা ও দাফন হয়।

তোয়াব খান ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরার রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক ‘জনতা’র মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক ‘সংবাদ’–এ। ১৯৬১ সালে তিনি দৈনিক ‘সংবাদ’–এর বার্তা সম্পাদক হন। ১৯৬৪ সালে তিনি যোগ দেন ‘দৈনিক পাকিস্তান’–এ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তাঁর আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় প্রচারিত হতো ‘পিণ্ডির প্রলাপ’ নামের একটি অনুষ্ঠান। স্বাধীনতার পর ‘দৈনিক পাকিস্তান’ থেকে বদলে যাওয়া ‘দৈনিক বাংলা’র প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি ওই দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ নতুন ব্যবস্থাপনায় আসা দৈনিক বাংলার সম্পাদক ছিলেন তিনি। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ২০১৬ সালে একুশে পদক পান তোয়াব খান।

তোয়াব খান ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। দেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ–এর মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। তোয়াব খান দীর্ঘ দিন দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’–এর উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন।