বায়রার সভায় দফায় দফায় হট্টগোল–ধাক্কাধাক্কি, সাংবাদিক হেনস্তা

সভা চলাকালে কয়েক দফা হট্টগোল হয়
ছবি: প্রদীপ সরকার

জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) মতবিনিময় সভায় কয়েক দফায় হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ মতবিনিময় সভা হয়। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীও হেনস্তার শিকার হন।

‘কম খরচে, দ্রুত কর্মী প্রেরণের নিমিত্তে, মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বায়রার সকল সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি’ শিরোনামে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বায়রা। সভায় উপস্থিত ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ। সভায় সভাপতিত্ব করেন বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার।

এ সভায় বায়রার নির্বাচিত নেতারা মঞ্চে ছিলেন। সংগঠনটির কয়েক শ সাধারণ সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন। বৈধ লাইসেন্সধারীরা বায়রার সাধারণ সদস্য।

বায়রার বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ১ হাজার ৭০০ বৈধ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০০টি এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে। বাকি প্রায় ১ হাজার ৬০০ লাইসেন্সধারী এজেন্সিও যেন মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারে, সে জন্য এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

বঞ্চিতদের অভিযোগ, কিছু এজেন্সি সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে। বায়রার কমিটিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাই মূলত সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছেন। বাকিদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, লাইসেন্সধারী সবাইকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার দাবিতে বেলা ১১টার দিকে নির্ধারিত সভা শুরুর আগেই হট্টগোল দেখা দেয়। সভায় ৩ নম্বর বক্তা হিসেবে মিডওয়ে ওভারসিজ লিমিটেডের কর্ণধার মোহাম্মদ রফিকুল হায়দার ভূঁইয়া বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে আবার হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। বেশ কিছু সময় ধরে চলা এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়। বক্তব্য চলাকালে ছোট পরিসরে আরও একবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বেলা একটার পর সাজ্জাদ হোসেন নামের এক সদস্যকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলেন বায়রার সভাপতি। সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এই ইসি কমিটি আসার পরে কারা কারা সমৃদ্ধ হয়েছে…।’

তখন দর্শক সারি থেকে অন্য এজেন্সির সদস্যরা সুবিধাভোগীদের নাম বলতে বলেন। এ সময় বায়রা সভাপতি বলেন, ‘সভার শুরুতে বলেছি, কারও নাম নিয়ে বিতর্ক করার প্রয়োজন নাই।’ এ সময় আবার হট্টগোল শুরু হয়। এ ঘটনার মধ্যেই সময় টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানবীর ইসলামসহ একাধিক গণমাধ্যমকর্মীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে।

সানবীর বলেন, ‘বেলা দেড়টার দিকে ডায়াসে থাকা টেলিভিশন সাংবাদিকদের বোম, মাইক্রোফোনসহ অন্যান্য যেসব যন্ত্রপাতি ছিল, সেগুলো তারসহ টেনে নিচে ফেলে দেয় সেখানে থাকা কয়েকজন। এ রকম অবস্থায় আমি প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের মধ্যে কয়েকজন আমার দিকে তেড়ে আসেন। আমার গায়ে হাত তোলেন। একপর্যায়ে আমাকে টেনে নামানোর চেষ্টা করেন।’

উপস্থিত বিভিন্ন এজেন্সির কর্ণধারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেসব এজেন্সি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে পারছে এবং যারা পারছে না, এ দুটি পক্ষই মূলত হট্টগোল ও ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে।

গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার। তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ দিতে পারলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

সভার শুরু থেকেই হট্টগোল, হাতাহাতি ও অসন্তোষ কেন জানতে চাইলে বায়রার সভাপতি বলেন, দেশে বৈধ লাইসেন্স আছে ১ হাজার ৮০০–এর বেশি এজেন্সির। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে ১০০টি। এককভাবে কয়েকজন কাজ করছে। এ কারণেই কিছুটা হট্টগোল বা কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।  

মতবিনিময় সভায় বায়রার সদস্য পর্যায়ের অন্তত ২০ জন বক্তব্য দেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সিন্ডিকেট ভেঙে মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে লাইসেন্সধারী সব এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান। বক্তাদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, বায়রা কমিটির সদস্যরাই এ সিন্ডিকেট করছে। কমিটির দু–একজনও সভায় সিন্ডিকেট করার কথা স্বীকার করেছেন।

টাওয়ার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইছহাক খান বলেন, ‘যাঁরা ১০০ লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন, বিনীতভাবে অনুরোধ করব আপনারা সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে আসুন। আমাদেরকেও ব্যবসা করার সুযোগ দিন। আমাদের সঙ্গে বৈষম্য কেন? আসুন আমরা এই ১০০ লাইসেন্সকে প্রতিহত করব। ব্যবসা হয় আমরা সবাই করব, না হয় বন্ধ থাকবে।’

সভায় বক্তব্য দেন বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার
ছবি: প্রথম আলো

বিষয়টি নিয়ে বায়রার সভাপতি আবুল বাশার বলেন, ‘কার্ড পেয়েছি ১০০। কাকে রেখে কাকে দেব?’ এ সময় দর্শক সারি থেকে এজেন্সিগুলোর মধ্যে লটারি করতে বলা হয়। তবে তাতে রাজি হননি বায়রা সভাপতি।

আবুল বাশার বলেন, ‘মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ মিলে সমঝোতার মাধ্যমে এটা করতে হয়। যেহেতু ওই দেশের সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমাদের সরকারকে অনুরোধ জানাব এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) পরিবর্তন করতে, যেন সবাই ব্যবসা করতে পারি।

মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। কীভাবে বাংলাদেশ থেকে কম খরচে আরও দ্রুত কর্মী নিয়ে তাঁদের দেশে কলকারখানা গড়ে তুলতে পারে, তা নিয়ে তিনি মতবিনিময় করবেন। আমরা দুই দেশের সরকারকেই সবার জন্য মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত করার অনুরোধ জানাব।’