ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাকে শিক্ষাজীবনে ফিরতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সহপাঠীরা। আজ সোমবার খাদিজার মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তাঁরা এই দাবি জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও বাতিলের দাবি জানান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে যদি গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষ আতঙ্কে থাকে, তাহলে এই আইন কোনোভাবে ভালো হতে পারে না। খাদিজাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় খাদিজাতুল কুবরাকে ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। গত এক বছরে তাঁর আর জামিন হয়নি।
মানববন্ধনে খাদিজার সহপাঠী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা জাহান বলেন, ‘সবার কথা বলার স্বাধীনতা আছে। খাদিজা এ জন্য কেন কারাগারে থাকবে? তার শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমাদের সঙ্গে ক্লাসে ফিরুক খাদিজা।’
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাহাত মিনহাজ যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থীর কারাগারে থাকা শুধু ভয়ংকর সময় পার করা না, তিনি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন। তাঁর জামিন মঞ্জুর করে আবার পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইয়াসীন আহমেদ বলেন, খাদিজার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। সে জামিন পাচ্ছে না। মানুষ যদি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে না পারে, তাহলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কীভাবে হয়, সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মানববন্ধনে খাদিজার মা ফাতেমা খাতুন মুঠোফোনে যুক্ত হন। তিনি মেয়ের মুক্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার জন্য যখন টাকা জোগাড় করছিলেন, সে সময়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ‘আমার রাতে ঘুম আসে না মেয়ের মুক্তির জন্য সবার সাহায্য চাই।’
খাদিজার বোন সিরাজুম মুনিরা বলেন, ‘আমরা পরিবার থেকে আর কিছু করতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাহায্য চাইতে গেলে তারা আমার ও মায়ের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। তবু আমরা মৌখিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্য চেয়েছি। নভেম্বরের আগেই সে জামিন পেলে পরীক্ষায় বসতে পারত।’
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী সুমাইয়া ইসলাম বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী কারাগারে রয়েছে কিন্তু শিক্ষকদের কোনো ভূমিকা দেখছি না। তাঁরা কিছু বলছেন না। তাহলে এখন যে শিক্ষকেরা আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন, বিপদে পড়লেও তাঁরা এভাবে নীরব থাকবেন।’
মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য চত্বর থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়কগুলো হয়ে আবার ভাস্কর্য চত্বরে এসে শেষ হয়। মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা খাদিজার মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।