চট্টগ্রামে নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এ বছর ৪৭ লাখ ৫২ হাজার পাঠ্যবইয়ের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ডিসেম্বরের মধ্যেই অধিকাংশ বই চলে আসে। কিন্তু বছরের শেষ দিনেও অর্ধেক বই এসে পৌঁছায়নি। মাধ্যমিকেও আসেনি চাহিদার অন্তত ২০ শতাংশ বই। এ কারণে কাল ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যপুস্তক হাতে পাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ২৪ লাখ বই চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। এসব বই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্কুলে স্কুলে। প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিকেও বেশির ভাগ বই আসেনি। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ পাঠ্যবইয়ের চাহিদা রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি বই পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাগজের সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে এ বছর পাঠ্যবই মুদ্রণে প্রথম থেকেই ধীরগতি ছিল। এ ছাড়া বই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি করা, ভালো মানের মণ্ডের সংকট, প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম দামে কাজ নেওয়াসহ কয়েকটি কারণে এবার সব বই ছাপানো যায়নি।
এনসিটিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঠ্যবই ছাপার কাগজ উৎপাদনের মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় ‘ভার্জিন পাল্প’। ভার্জিন পাল্পের প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এই উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। জাহাজ ভাড়াও বেড়ে গেছে। আবার ডলারের সংকটের কারণে আমদানিও কমে গেছে। এসব কারণে এবার পাঠ্যবই ছাপাতে হিমশিম খাচ্ছে ছাপাখানাগুলো।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বই ছাপানোর কার্যাদেশ দিতে দেরি হয়েছে। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যাবে। কোন কোন ছাপাখানায় বই আটকে আছে, তা দেখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪ হাজার ২৬৫টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আছে প্রায় ১০ লাখ ১৮ হাজার। অন্যদিকে জেলায় মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ১ হাজার ২০০টি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লাখ ৪৩ হাজারের মতো।
চট্টগ্রাম জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রাথমিকের বই ছাপাচ্ছে সাগরিকা প্রিন্টার্স, অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসসহ আরও বেশি কিছু প্রতিষ্ঠান। সাগরিকা প্রিন্টার্সের কর্ণধার গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মাধ্যমিকের বই ছাপানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রাথমিকের বই ছাপানোর কাজও চলছে। প্রাথমিকের প্রতি শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি বইগুলো জানুয়ারির প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে পৌঁছে যাবে।
বই ছাপানোর সংকটের বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, বড় কোম্পানিগুলো ডলার–সংকটের কারণে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারেনি। এ কারণে ভার্জিন পাল্প আমদানি বন্ধ ছিল। এখন টুকটাক আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু এ বছরের বই উৎসবে তা কাজে আসবে না। গিয়াস উদ্দিন জানান, ভার্জিন পাল্প দিয়ে কাগজ তৈরি করা হয়। সেই কাগজেই পাঠ্যবইগুলো ছাপানো হয়। ভার্জিন পাল্পের তৈরি কাগজে ছবি ও লেখা স্পষ্ট আসে। কাগজে উজ্জ্বলতা থাকে। বইয়ের ক্ষেত্রে কাগজের মানও শিথিল করা হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সব বই এখনো এসে পৌঁছায়নি। এ কারণে শিক্ষার্থীরা সব বই কাল উৎসবে পাবে না।