সরেজমিন—২ কুড়িগ্রাম
গরিবের চাল ও টাকা ভাগ–বাঁটোয়ারা
সরকারি সহায়তার নানা কর্মসূচিতে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে গরিব মানুষ সুফল পাচ্ছে না।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের বাহুবল গ্রামের ভোলা মিয়া ২০-২৫ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান। জায়গাজমি বলতে একচিলতে বসতভিটা। ভোলা মিয়া যত দিন ঢাকায় থাকেন, তত দিন কাজ চলে। গ্রামে এলে বসে বসে খেতে হয়। তখন সুদে টাকা নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
ভোলা মিয়ার মতো দেশের অতিদরিদ্র মানুষের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা), ভিজিএফ, টিআর, জিআরসহ অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিসহ (ইজিপিপি) সরকারের বেশ কিছু কর্মসূচি রয়েছে।
তবে ভোলা মিয়ার দাবি, তাঁর ভাগ্যে এসব কর্মসূচির কিছুই জোটেনি। বাড়ির টিউবওয়েলের পানি ছাড়া সবখানে টাকা লাগে। সরকারের অনুদান নিতে গেলেও মেম্বার-চেয়ারম্যান টাকা চান। টাকাও দিতে পারেন না, কিছু জোটেও না।
দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস কুড়িগ্রামে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের সর্বশেষ হিসেবে কুড়িগ্রামে প্রায় ৭১ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। জেলায় দারিদ্র্য কমাতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ছাড়াও বেশ কিছু প্রকল্প আছে। তবু দারিদ্র্য কমছে না।
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় মিলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। নানা ত্রুটি ও জটিলতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্ধেক কাজও শেষ করা যায়নি।আবদুল হাই সরকার, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা
৯ উপজেলা, ৩ পৌরসভা ও ৭২ ইউনিয়ন মিলে কুড়িগ্রাম জেলা। জনসংখ্যা ২৩ লাখের কিছু বেশি। ১৫টি ইউনিয়নের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, চাকরিজীবী, রাজনৈতিক কর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ অর্ধশত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, কুড়িগ্রামে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণ হচ্ছে। ফলে গরিব মানুষ এসব কর্মসূচির সুফল পাচ্ছেন না।
কর্মসংস্থানে জনপ্রতিনিধিদের স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীরা
নুনখাওয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি ভোলা মিয়ার গ্রামে। তাঁর পরিবার বেশ সচ্ছল। অভিযোগ রয়েছে, অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা ও ভাই জাকারিয়া সরকারের নাম রয়েছে।
একইভাবে নুনখাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের দুই ভাই হাবিবুল ইসলাম ও পল্লিচিকিৎসক মোহাম্মদ আলী, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল কাদেরের ছেলে সাহাজুল আলম, এনামুল হক ও পুত্রবধূ আদুরী বেগম এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোকারুল ইসলামের নাম তালিকায় আছে। তাঁরা মাটি কাটেননি। কিন্তু তাঁদের নামে দিনে ৪০০ টাকা করে মজুরি তোলা হয়েছে।
৭ জুলাই জাকিয়া সুলতানার বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, তালিকায় নিজের ও দেবরের নাম থাকার কথা তিনি শুনেছেন। তিনি এর বেশি কিছু জানেন না।
জাকিয়ার স্বামী জাহাঙ্গীর দাবি করেন, এই টাকা তিনি নেননি। প্রতিবেশী এক নারীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছিল না। এ জন্য তাঁর স্ত্রীর নাম দিয়েছেন। তবে প্রতিবেশী ওই নারীর নাম তিনি বলতে পারেননি।
যোগাযোগ করা হলে নুনখাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ষাটোর্ধ্ব শ্রমিক নেওয়া যায় না। তাই তাঁদের সুবিধা দিতে অন্যের নাম দেওয়া হয়েছে। ইউপি সদস্য আবদুল কাদের অবশ্য বলেন, ভোট করতে টাকাপয়সা খরচ হয়েছে। দু-একটা নাম দেওয়া লাগে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) আওতায় ৯ উপজেলায় ২৭ হাজার ৯২৮ জন সুবিধা পেয়েছেন। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় মিলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। নানা ত্রুটি ও জটিলতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্ধেক কাজও শেষ করা যায়নি।
একসময় মঙ্গা হতো, এমন সব জেলায় কাজের সুবিধা দিতে ইজিপিপির প্রকল্প নেওয়া হয়, যা স্থানীয়ভাবে ‘মঙ্গা’ প্রকল্প নামে পরিচিত। স্থানীয় অতিদরিদ্র ও মৌসুমি বেকারেরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার কথা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের সুবিধাভোগীদের তালিকা নিয়ে বেলগাছা ইউনিয়নে সরেজমিনে অনুসন্ধান করেন এ প্রতিবেদক। এতে দেখা যায়, ৩০৫ সুবিধাভোগীর মধ্যে অন্তত ৭৪ জন সচ্ছল পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে তিনজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাঁচজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁরা সবাই সচ্ছল। মাটি কাটার কাজও করেননি তাঁরা।
৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি মাটি না কাটলেও তদারকি করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার দাবি, লটারির মাধ্যমে তালিকা করা হয়েছে। এতে তাঁদের কোনো হাত নেই। লটারিতে যে দু-চারজন সচ্ছল পরিবারের নাম এসেছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে।
বেলগাছা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান বেশ অবস্থাপন্ন। তাঁর চার ছেলের মধ্যে দুই ছেলে চাকরি করেন। এরপরও তাঁর তৃতীয় ছেলে আখতারুল ইসলামের নাম আছে ইজিপিপি কর্মসূচিতে। ১৯ জুলাই মজিবরের বাড়িতে কথা হয় তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, তাঁরা বদলি শ্রমিক দিয়েছিলেন।
একই ওয়ার্ডের ব্যবসায়ী রাজু আহমেদের পাকা বাড়ি। তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগমের নামও আছে তালিকায়। এ ছাড়া তালিকায় বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপির ছয় পুরুষ ও দুই নারী সদস্যের পরিবারের অন্তত ১১ জনের নাম পাওয়া গেছে।
৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে দরিদ্র মানুষের বদলে জনপ্রতিনিধিদের পকেট ভারী হচ্ছে। এই কর্মসূচির জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে।এনামুল হক চৌধুরী, জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেদুল হাসান দাবি করেন, অসচ্ছল মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অগ্রাধিকার তালিকা ধরে লটারি করতে বলা হয়েছিল। লটারিতে সচ্ছল কেউ ঢুকে পড়লে তাঁর নাম বাদ দিতে বলা হয়েছে। চেয়ারম্যান কীভাবে তালিকা করেছেন, তাঁর জবাবদিহি তিনিই করতে পারবেন।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে দরিদ্র মানুষের বদলে জনপ্রতিনিধিদের পকেট ভারী হচ্ছে। এই কর্মসূচির জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে।
ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে প্রকল্পের টাকা ফেরত
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১-২২ অর্থবছরে পাইলট প্রকল্প হিসেবে উলিপুর উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫ হাজার ৭১ জনের জন্য ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৬ হাজার ৩৩৬ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু তালিকা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে তালিকা চূড়ান্ত করা যায়নি। এতে ওই অর্থ ফেরত গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌলা বলেন, ছয় ইউনিয়নের তালিকা সময়মতো দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া গেলেও বাকি সাত ইউনিয়ন তালিকা দিতে ব্যর্থ হয়। গত ১০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বরাদ্দ ফেরত যায়।
কুড়িগ্রামের সরকারি সব কর্মসূচিতে দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে। দলীয়করণের কারণে দরিদ্রদের এসব কর্মসূচিও দুর্নীতি-অনিয়ম থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে প্রশাসনকে কঠোর ও আন্তরিক হতে হবে।সামিউল হক, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি
ধরণীবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. এরশাদুল হক অভিযোগ করেন, তাঁর ইউনিয়ন থেকে ৩১৫ সম্ভাব্য উপকারভোগীর তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ২০ শতাংশ করে ভাগ দাবি করেন। সেটি সমন্বয় করতে গিয়ে তালিকা তৈরিতে দেরি হয়েছে।
তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁরা চেয়ারম্যানের কাছে কেবল কয়েকজনের নাম সুপারিশ করেছিলেন।
একই ধরনের অভিযোগ করেন থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমানও।
তবে দলীয় ভাগাভাগির অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, চেয়ারম্যানরা নতুন হওয়ায় এবং প্রশাসনের গাফিলতির কারণে প্রকল্পের টাকা ফেরত গেছে।
বেগমগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, তিনিও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাগ দিয়ে তালিকা জমা দেন। কিন্তু প্রকল্পের অর্থ ফেরত যাওয়ায় অতিদরিদ্র মানুষের ক্ষতি হলো।
ভিজিএফ বিতরণের অনিয়ম, ভাগাভাগি
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে সরকার দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করে। এই চাল বিতরণে দলীয় নেতাদের ভাগাভাগি, স্বজনপ্রীতি, ওজনে কম দেওয়া ও সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে চাল তুলে আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুড়িগ্রামে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৫০৫ জনকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নে জনপ্রতি ১০ কেজি করে ৮ হাজার ৯১ জনের চাল বরাদ্দ হয়েছিল।
যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী দাবি করেন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে তিনি বরাদ্দের চাল উপজেলা পরিষদকে ২০ শতাংশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগকে ১৫ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের জন্য ১০ শতাংশ দিয়ে বাকি ৫৫ শতাংশ তাঁরা মেম্বার-চেয়ারম্যান মিলে বিতরণ করেন। তাঁর দাবি, ভাগাভাগির কারণে তাঁর ইউনিয়ের প্রায় তিন হাজার দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষ চাল পাননি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম অবশ্য দাবি করেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের চাচাতো ভাই আক্তার আহসানের নামে ১১৫ জনের তালিকা দেখিয়ে যাদুরচর ইউপি থেকে ২৩ বস্তা চাল উত্তোলন করা হয়। ইউপির মাস্টাররোলে (৫০৬৯-৫১৬৮) এই নেতার নামযুক্ত সিলসহ স্বাক্ষর রয়েছে।
আক্তার আহসান নিজেকে মন্ত্রীর প্রতিনিধি দাবি করে প্রথম আলোকে বলেন, এসব মন্ত্রীর ভাগের চাল। তিনি এলাকায় না থাকায় স্থানীয় লোকজন চাল উত্তোলন করেন।
তবে ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী অভিযোগ করেন, আহসান তাঁর প্রতিনিধি আরিফের মাধ্যমে চাল তুলে নেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, রৌমারীতে ভিজিএফের চাল কিছু নেতা-কর্মীর কাছে ঈদ সেলামির মতো ব্যাপার হয়ে গেছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ৪ হাজার ১২৮ পরিবারের মধ্যে ৪৫০ পরিবার ঈদের আগে চাল পায়নি। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ১৮ বস্তা চাল (৯৪০ কেজি) চেয়ারম্যান সরিয়ে নেন। তবে চেয়ারম্যান বাবলু মিয়ার দাবি, তিনি ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় ১২-১৩ বস্তা চাল বিতরণ করেন।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ভিজিএফের চালে ১৮ শতাংশ হিসেবে ৭৪৩ জনের ভাগ নেয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। দলের ইউনিয়ন সভাপতি আখতার হোসেন বলেন, এসব চাল চেয়ারম্যানের সামনেই বিতরণ করা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যানের দাবি, ভাগ ছাড়াও তাঁকে সরকারি দলের অনেক নেতা-কর্মীকে চাল দিতে হয়েছিল।
সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল বাতেন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউনিয়নে ৭ হাজার ৩৪২ জনের বরাদ্দ থাকলেও ৫ হাজার ৮৭৩ জনের চাল আসে। বাকি ২০ শতাংশ উপজেলা চেয়ারম্যান কেটে রাখেন।
তবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, অভিযোগ সত্য নয়। তাঁরা শুধু দলীয় গরিব কিছু কর্মীর নাম সুপারিশ করেন। ইউনিয়ন পরিষদ ওই চাল বিতরণ করে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দাবি করেন, অনিয়ম ও ভাগাভাগির বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
তবে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সামিউল হক প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামের সরকারি সব কর্মসূচিতে দুর্নীতি ও লুটপাট হচ্ছে। দলীয়করণের কারণে দরিদ্রদের এসব কর্মসূচিও দুর্নীতি-অনিয়ম থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে প্রশাসনকে কঠোর ও আন্তরিক হতে হবে।