‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ হামলাকারীদের বিচারের দাবি জোবায়েরের শিক্ষক-সহপাঠীদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জোবায়েরকে নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের ওপর হামলার বিচার দাবি করেছেন তাঁর শিক্ষক ও সহপাঠীরা। তাঁরা বলেছেন, জোবায়েরের ওপর যেভাবে সংঘবদ্ধ হামলা করা হয়েছে, তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় গ্যাং–সংস্কৃতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের ওপর নির্মম ও নৃশংস হামলার প্রতিবাদে এবং গ্যাং–সংস্কৃতি নির্মূলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এসব দাবি জানান। অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

কর্মসূচি শেষে জোবায়েরের পরিবারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়াউর রহমান ও অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন শাহারিয়া আফরিন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সংঘবদ্ধভাবে একজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা খুবই ভয়ানক বিষয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।
খন্দকার ফারজানা রহমান, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন

কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্‌দীন হল মাঠ এলাকায় জোবায়েরকে স্টাম্প, রড, বাঁশ ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন তাঁর একদল সহপাঠী। হামলায় জোবায়েরের মাথার বাঁ পাশে ও বাঁ চোখে জখম হয়েছে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে থেঁতলে গেছে ও ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তাঁর মা সাদিয়া আফরোজ খান।

শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে গ্যাং–সংস্কৃতিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানান
ছবি: প্রথম আলো

দুপুরে রাজু ভাস্কর্যে ডাকা মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, সংঘবদ্ধভাবে একজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা খুবই ভয়ানক বিষয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।

খন্দকার ফারজানা বলেন, ‘এর আগে এ ধরনের অপরাধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি দিয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখি। আশা করছি, এ ঘটনায়ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ভবিষ্যতে গ্যাং–সংস্কৃতি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব বলেন, ‘আজ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদ নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় প্রলয় নামের এমন দুর্ধর্ষ গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর এমন পৈশাচিক হামলার দায় কে নেবে? আমরা চাই, প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যদের স্থায়ী বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাং–সংস্কৃতির কবর রচিত হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

জোবায়েরের সহপাঠী জামিল শামস বলেন, ‘জোবায়েরের ওপর যেভাবে হামলা করা হয়েছে, তা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। আমরা চাই না, এই ক্যাম্পাসে আর কোনো অপরাধী চক্র গড়ে উঠুক। ক্যাম্পাসে আর কোনো গ্যাং তৈরি না হোক।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হবে, সেই প্রত্যাশা জানিয়ে জামিল শামস বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে ন্যায়বিচার পান এবং ক্যাম্পাসে নিরাপদভাবে চলাচল করতে পারেন, আমরা সে ধরনের পরিবেশ চাই। জোবায়েরের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

মানববন্ধনে অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল আলিম, জান্নাত ইশা, খালিদ মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রলয় নামের ক্যাম্পাসভিত্তিক একটি গ্যাংয়ের সদস্য বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন জোবায়েরের মা। অভিযোগটি আজ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ।

মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়াকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। বিভিন্ন হলের ১৯ ছাত্রের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ছয়-সাতজনকে মামলায় আসামি করা হয়। তাঁরা সবাই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্য।

ইতিমধ্যে ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে সাকিব ও নাঈমুর রহমান ওরফে দুর্জয় নামের দুই আসামিকে আজ সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ।

আরও পড়ুন