বিচারককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি, ৩ জনকে তলব

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা এক মামলায় দুই আসামিকে উচ্চ আদালতের দেওয়া জামিনের বিষয়টি আসামিপক্ষের কোনো ব্যক্তি আদালতকে অবহিত করেননি। জামিনসংক্রান্ত আইনজীবী সনদের বিষয়টিও আদালতকে অবহিত করা হয়নি। এক ব্যাখ্যায় শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান উচ্চ আদালতে এ কথা বলেছেন। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ আদেশ দেন।

একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের আগাম জামিনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতকে জানানো হয়েছে কি না, সে বিষয়ে জানাতে আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহ আলম হাওলাদার ও সংশ্লিষ্ট জিআরও মো. মোতাহারকে আগামী ২ নভেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আসামিদের আগাম জামিনের বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে জানাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুরুজ উদ্দিনকেও সেদিন আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া দুই আসামিকে আটক, নির্যাতন ও তাঁদের কাছ থেকে চেক নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং জামিন সত্ত্বেও আসামিদের কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অবস্থান ব্যাখ্যাবিষয়ক শুনানিতে এ আদেশ দেওয়া হয়।
আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের আগাম জামিনের বিষয়টি আসামিপক্ষের কেউ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরানকে অবহিত করেননি—ব্যাখ্যায় এটি উল্লেখ করেছেন। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আসামিদের আগাম জামিন ও এ–সংক্রান্ত আইনজীবীর সনদের বিষয়ে নিজেরা জানতেন কি না এবং আদালতকে জানানো হয়েছিল কি না—সে বিষয়ে হলফনামা আকারে তিনজনকে বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহ আলম হাওলাদার, সংশ্লিষ্ট জিআরও মো. মোতাহার এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুরুজ উদ্দিনকে আগামী ২ নভেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

ঘটনার পূর্বাপর

আসামিপক্ষের আইনজীবীর তথ্যমতে, ওই মামলায় গত ২৯ মে হাইকোর্ট আসামিদের জামিন দেন। ৩০ মে তাঁদের (সাদ্দাম ও বকুল) কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিন মঞ্জুরসংক্রান্ত আইনজীবীর সনদ দেওয়া হয়। এ সত্ত্বেও গত ১ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করেন। সেদিন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান আসামিদের জেলহাজতে পাঠান। এই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়। অন্যদিকে ২ জুন তদন্ত কর্মকর্তা তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ৪ জুন রিমান্ড না মঞ্জুর করে সংশ্লিষ্ট বিচারক তাঁদের জামিন দেন।

ওই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আদেশ চেয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীর এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৩ জুন হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শরীয়তপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির ও তৎকালীন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে গত ১৬ জুলাই হাজির হতে নির্দেশ দেন। ধার্য তারিখে তাঁরা আদালতে হাজির হন। সেদিন আদালত শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে ৬ আগস্ট শুনানির জন্য দিন রাখেন।

আরও পড়ুন

গত ৬ আগস্ট শুনানি নিয়ে আদালত জামিন সত্ত্বেও আসামিদের কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আল ইমরানকে ২০ আগস্ট আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ধার্য তারিখে তিনি আদালতে হাজির হন। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত ২০ আগস্ট পরবর্তী দিন রাখেন। সেদিন আদালত আদেশের জন্য ১৫ অক্টোবর দিন রাখেন।

এ অনুসারে আজ বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে। আদালতে শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল ইমরান, তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনির ও তৎকালীন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন