গরমে প্রাণ জুড়ায় রাজীবের মাঠা

কারখানায় তৈরি হচ্ছে মাঠা। এই মাঠা বিক্রি হয় তিন উপজেলায়। মিরসরাই উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের প্রজেক্ট বাজারে । সম্প্রতি তোলাপ্রথম আলো

বাবা চিত্তরঞ্জন দাশের ছিল মিষ্টি তৈরির ব্যবসা। তখন রাজীব সদ্য কিশোর। চরে চরে ঘুরে গরু-মহিষের বাথান থেকে দুধ সংগ্রহ করে আনা ছিল তাঁর দায়িত্ব। সেই থেকেই দুধ-দইয়ের সঙ্গে সখ্য রাজীব কুমার দাশের(৩০)। দেড় বছর আগে বাবার মিষ্টি দোকানের সঙ্গে মাঠা তৈরির ব্যবসা শুরু করেন রাজীব। অল্প সময়ে মিরসরাই উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর মাঠার খ্যাতি। প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ মণ মাঠা বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার চর সোনাপুর এলাকায় রাজীব কুমার দাশের বাড়ি। তবে তাঁর ব্যবসা পরিচালিত হয় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলাজুড়ে। মিরসরাই উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের প্রজেক্ট বাজারে একটি ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ ট্যাংক বসিয়ে ও দুটি দোকান খুলে মাঠা বিক্রি করেন রাজীব। মাঠা তৈরি ও বিক্রিতে তাকে সাহায্য করেন ছয়জন কর্মচারী।

ভ্রাম্যমাণ ভ্যান করে বিক্রি করা হয় রাজীবের মাঠা। সম্প্রতি মিরসরাই উপজেলায়
প্রথম আলো

গত রোববার দুপুরে দোকানে গিয়ে কথা হয় রাজীব কুমার দাশের সঙ্গে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাট চোকান বলে জানান রাজীব। ভোরবেলায় চরে ঘুরে ঘুরে দুধ সংগ্রহ করে দিনভর বাবার দোকানে মিষ্টি তৈরি ও বিক্রির কাজ করতেন তিনি। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার আমন্ত্রণে মাঠা তৈরির প্রশিক্ষণ নেন রাজীব। এরপর সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু ঋণ ও অনুদান সুবিধা পান। পরে দুজন কর্মচারী নিয়ে ছোট একটি কারখানা করে মাঠা তৈরি শুরু করেন। শুরুর দিকে মাঠার মান ভালো না হওয়ায় কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তবে হাল ছাড়েননি। আরেক দফা প্রশিক্ষণ নেন। এর পর থেকেই মাঠার মান ভালো হতে থাকে। চাহিদাও বাড়তে থাকে রাজীবের মাঠার। মিরসরাই পেরিয়ে রাজীবের মাঠার এখন বিক্রি হয় ফেনীর সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলাতেও।

মিরসরাইয়ের মুহুরি প্রকল্প এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী মো. ইউনূস রাজীবের মাঠার নিয়মিত গ্রাহক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরমে রাজীবের মাঠার কোনো তুলনা হয় না। এক গ্লাস খেলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

উদ্যোক্তা রাজীব কুমার দাশ
প্রথম আলো

নিজের কাজ নিয়ে রাজীব কুমার দাশ বলেন, ‘মাঠা তৈরিতে আমি চর এলাকার গরু ও মহিষের দুধ, দই, চিনি, ঘি ও লবণ ছাড়া আর কোনো উপাদান ব্যবহার করিনি। এখন একটি ট্যাংক ভ্যান ও দুটি দোকানে মাসে ৫-৬ লাখ টাকার মাঠা বিক্রি হয়। কাঁচামাল, কর্মচারীদের বেতন, দোকান ও কারখানা ভাড়াসহ সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ থাকে আমার। এ আয় দিয়ে বাবা-মা আর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালো আছি। তবে মাঠা ব্যবসার একটি বড় সমস্যা হচ্ছে শীতকালে চাহিদা একেবারে কমে যায়। তখন বেশ বিপাকে পড়ি। ইচ্ছা আছে সামনে ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ানোর।’

রাজীব কুমার দাশের মাঠার নিয়মিত ক্রেতা মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ মেলায় প্রথমবার রাজীবের তৈরি মাঠা খেয়েছি। আমার বেশ ভালো লেগেছে। এখন উপজেলার বিভিন্ন সভায় মাঝেমধ্যে তাঁর মাঠা নিয়ে যাই আমরা। স্থানীয় উপকরণ দিয়ে পণ্য তৈরি করা এমন উদ্যোক্তা আরও উঠে আসা দরকার।’