কচ্ছপ ও হাঙরের অবৈধ বাজারে বিশ্বের শীর্ষ ১২-তে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী রক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। সংবিধানে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার বিষয়টি যুক্ত করেছে। দেশে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনও রয়েছে। তারপরও দেশে বন্য প্রাণীর বসতি ধ্বংস হচ্ছে। চোরা শিকার এবং পাচারকারীদের কবলে পড়ে দেশের বন্য প্রাণী দ্রুত কমে আসছে। বিশ্বে কচ্ছপের অবৈধ বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানিকারক হিসেবে দশম। অথচ দেশের আইন ও আন্তর্জাতিক নিয়মে হাঙর হত্যা নিষিদ্ধ। অপর দিকে বিশ্বের ১২তম হাঙরের পাখনা রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ।
বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবসের এক আলোচনার মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বন্য প্রাণীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি-ডব্লিইউসিএস, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহাঙ্গীর আলম। রাজধানীর বন ভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বের বন্য প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আধার হচ্ছে এশিয়া। এই মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ২৯৬ টন হাঙরের পাখা এবং মাংস শুকিয়ে রপ্তানি করা রয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৩১ প্রজাতির বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে বন্য প্রাণী রক্ষায় আরও সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বন বিভাগের পক্ষে উপপ্রধান বন সংরক্ষক জাহিদুল কবীর দেশের বন্য প্রাণী রক্ষায় থাকা আইন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা। এ পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৬১৯ প্রজাতির বন্য প্রাণী নথিবদ্ধ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী হিসেবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতি, কুমির, কচ্ছপ, ডলফিন সংরক্ষণে সরকার উদ্যোগ নিয়ে সফলতা পেয়েছে। তবে দেশে বন্য প্রাণীর বসবাসের এলাকাগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে আরও বেশি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
দেশে বন্য প্রাণী বসতি এলাকা কমে আসছে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের বন্য প্রাণীর বসবাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি সম্প্রতি দেখেছি এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে মাছ ধরার জাল পেতে রাখা নেই। ফলে সেখানে কোনো ধরনের জলজ প্রাণীর জন্য টিকে থাকা কঠিন। শুধু বন বিভাগের পক্ষে এককভাবে এ ধরনের জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকাগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব না। সরকারের অন্য বিভাগগুলোকে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি একক উদ্যোগ নেব। দেশের সাফারি পার্কগুলোর চারপাশের দুই কিলোমিটার এলাকায় শিল্পকারখানা নির্মাণ করে যেন প্রাণীদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। সে জন্য আমরা ওই এলাকাগুলো সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করার পরিকল্পনা নিয়েছি।’
সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেন চৌধুরীসহ শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বন্য প্রাণীবিষয়ক দেশি ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।