যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনের একাংশের স্ক্রিনশট

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের সহায়তা চেয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে গতকাল মঙ্গলবার এ খবর প্রকাশ করেছে তারা। হিন্দুস্তান টাইমস বলেছে, বিশেষত বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক যে রূপ নিয়েছে, সে বিষয়ে ভারতের সহায়তা চেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চার দিনের সফরে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। হিন্দুস্তান টাইমসের সূত্র বলছে, এ সফরের আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ভারতের সামনে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আশা, ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন মোদি।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে বারানসিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে ১২ জুন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে। সূত্র বলছে, বিভিন্ন পর্যায়ে ভারতের কর্মকর্তাদের কাছে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বিষয়টি তুলেছেন।

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে আহ্বান জানিয়ে আসছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি। পিটার হাসের এ তৎপরতার জেরে কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে।

এরই মধ্যে গত মে মাসে বাংলাদেশ নিয়ে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া কেউ বাধাগ্রস্ত করলে তাদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে বাংলাদেশ সরকার বিরক্ত হয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের সূত্র বলছে, নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনায় একটি মুক্ত ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত করেছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে—এমন সম্ভাবনার ওপরও আলোকপাত করেছে তারা।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশটিতে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকট এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চাপের মুখে রয়েছে সরকার।

বাংলাদেশের নেতারা প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বানকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে ‘বিচলিত নয়’ তাঁর সরকার। তবে সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান থেকে বিরোধীরা ফায়দা নিক, তা চাইছে না বাংলাদেশ সরকার।

বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের সরকারের যে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তার বৃহত্তর জায়গা থেকে মার্কিন ভিসা নীতিকে দেখা উচিত।’

আরও পড়ুন

নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ সরকারের পাশে রয়েছে উল্লেখ করে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, তা ধরে রাখাটা পুরোপুরি বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে।

আরও পড়ুন