বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে পারলে অনেক নেতাকেই দেশ ছাড়তে হতো না

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৬ জানুয়ারিছবি: প্রথম আলো

বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে পারলে অনেক নেতাকেই দেশ ছাড়তে বা কারাগারে যেতে হতো না বলে মন্তব্য করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন প্রবর্তনের পর থেকে বিগত সরকারের আগপর্যন্ত বিচার বিভাগ প্রায় স্বাধীন ছিল, সংবাদমাধ্যম স্বাধীন ছিল, মানুষের স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু বিগত সরকার এই স্বাধীনতা হরণ করেছিল।

রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আজ সোমবার বিকেল এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবদুর রাজ্জাক এ কথা বলেন। ‘ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: সংবর্ধনা অনুষ্ঠান’–এর আয়োজন করে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের অ্যাসোসিয়েটস।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিচার বিভাগকে যদি আমরা বাঁচাতে পারতাম, পারতাম কি না, আমি জানি না? তাহলেও এই জাতি অনেক আগে এই ডিক্টেটরশিপের (একনায়কতন্ত্র) হাত থেকে রক্ষা পেত।’ তিনি বলেন, বার (আইনজীবী সমিতি) ও বেঞ্চ (আদালত), আপামর জনসাধারণ—সবারই একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত, যাতে বিচার বিভাগ কোনো সময়ই পরাধীন না হয়। পাশাপাশি একটা স্বাধীন বার (আইনজীবী সমিতি) গড়ে তুলতে হবে।

এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ‘আজকে আমরা স্বাধীন হয়েছি ৫ আগস্ট, আমরা সৌভাগ্যবান। যাঁরা তাঁদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করতে পারব না। তাঁরা যদি সর্বোচ্চ ত্যাগ না করতেন, তাহলে আজকে এখানে সভা করতে পারতাম না, আমি এ দেশে ফিরে আসতে পারতাম না।’

দেশ ছাড়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘১১ বছর কেন আমি বাইরে থাকলাম? ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো। দেশের অবস্থা খুবই খারাপ। বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে। আমাদের ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে। তখন চিন্তা করলাম, মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য লন্ডনে যাব।’ তিনি বলেন, ১৮ ডিসেম্বর সকালে লন্ডনে পৌঁছার পর জানতে পারেন, তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী) তাঁকে গ্রেপ্তার করার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘…পাঁচ বছর পুলিশ আমাকে অত্যন্ত জ্বালাতন করেছে। ২০১৩ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর পুলিশ আমার বাসায় গিয়েছিল। ...দেশের বাইরে চলে গেলাম। ফিরতে আমার ১১ বছর লাগল। ১১ বছর ইংল্যান্ডে ছিলাম, সেখানে আমি প্র্যাকটিস করেছি।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, এম বদরুদ্দোজা ও মো. রুহুল কুদ্দুস, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন, আইনজীবী এম বেলায়েত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইনজীবী চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী।