স্বল্প বাজেটের ফ্ল্যাটে আগ্রহ বেশি মানুষের

রিহ্যাব আয়োজিত আবাসন মেলায় সিপিডিএল স্টলে ক্রেতারা বিভিন্ন ফ্ল্যাট সম্পর্কে কথা বলছেন। দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম র‍্যাডিসন ব্লু মোহনা হলে
ছবি: জুয়েল শীল

শুক্রবার ছুটির দিনে জমে উঠেছে চট্টগ্রামে রিহাবের আবাসন মেলা। দর্শনার্থীরা ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মধ্যে স্বল্প বাজেটের ফ্ল্যাটের খোঁজ করছেন বেশি। অনেকে মেলায় ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাটের বিস্তারিত জেনে নিচ্ছেন।

চট্টগ্রাম নগরের র‍্যাডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলের মোহনা হলে চার দিনব্যাপী এ মেলা গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) মেলার আয়োজন করে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলছে।

এবার এক ছাদের নিচে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৪৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। আবাসন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ঋণদাতা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ভবন নির্মাণসামগ্রীর প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

আজ বেলা ১১টার দিকে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থীরা ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বেশি খোঁজ করছেন। আগ্রাবাদ থেকে মেলায় আসা তানভীর ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে জানান, খাতুনগঞ্জে তিনি নিত্যপণ্যের ব্যবসা করেন। জীবনের বড় একটা সময় তিনি ভাড়া বাসায় কাটিয়েছেন। এখন তিন বেডের একটি ফ্ল্যাট কিনতে চান। নগরের চকবাজার, রাহাত্তারপুল এলাকায় থাকতে চান। ফলে দামে ও স্থানে মিলে গেলে কিনে নেবেন।

নাসির উদ্দিন নামের ষাটোর্ধ্ব এক দর্শনার্থী মেলায় প্রথম আলোকে বলেন, একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন তিনি। প্রায় ৩ বছর আগে অবসরে গেছেন। তাঁর স্ত্রী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কয়েক বছরের মধ্যে তিনিও অবসরে যাবেন। তাঁর দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কয়েক বছর ধরেই তাঁরা একটি ফ্ল্যাট কিনতে চাইছেন। কিন্তু দামে মিলছে না। এবার মেলায়ও তাঁরা স্বল্প বাজেটের একটি ফ্ল্যাটের খোঁজ করছেন।

আবাসন প্রতিষ্ঠান সিপিডিএল ঢাকা ও চট্টগ্রামের অবস্থিত মোট ৩০টি প্রকল্প নিয়ে এবারের মেলায় এসেছে। চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় তাদের ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির রেডি ফ্ল্যাট রয়েছে ৩৪টি। তারা প্রতি বর্গফুটের দাম রাখছে ৬ হাজার ৫০০ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সিপিডিএলের সিনিয়র প্রোপার্টি কনসালট্যান্ট আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের প্রাইম লোকেশনে তাদের প্রকল্পগুলোর অবস্থান। ইতিমধ্যে ৩৪টি প্রকল্প তারা গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করেছেন। মানসম্মত ও অভিজাত প্রকল্প তৈরিতে তাদের সুনাম রয়েছে।

অন্যদিকে সাফ হোল্ডিংস লিমিটেড এবারের মেলায় ৪টি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে ৩টি আবাসিক ও একটি বাণিজ্যিক। আবাসিক প্রকল্পগুলো চকবাজারের প্যারেড কর্নার, বহদ্দারহাট ও নাছিরাবাদ আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। বাণিজ্যিক প্রকল্পটি চকবাজর এলাকায়। সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ মাস পর্যন্ত কিস্তির সুবিধা দিচ্ছে তারা।

এপিক প্রপার্টিজ লিমিটেড এবার মোট ১২টি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে একটি বাণিজ্যিক। বাকিগুলো আবাসিক। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এস এম মনজুর মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ৭০ থেকে ৮০ বা ১ কোটি টাকার নিচের দরের ফ্ল্যাট বেশি খুঁজছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।

রিহ্যাব আয়োজিত আবাসন মেলায় জুমায়রাহ স্টলে ক্রেতারা বিভিন্ন ফ্ল্যাট সম্পর্কে কথা বলছেন। গতকাল দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম র‍্যাডিসন ব্লু মোহনা হলে
ছবি: প্রথম আলো

মেলায় কথা হয় জুমাইরা হোল্ডিংসের সহকারী ব্যবস্থাপক এস এম শোহরাব হোসাইনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, এবার মোট ৯টি প্রকল্প নিয়ে তাঁরা হাজির হয়েছেন। ক্রেতাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তাদের নির্মিত ভবনে ব্যবহার করা হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও মানসম্মত কাঁচামাল। গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আধুনিকভাবে সাজানো প্রতিটি প্রকল্প।

অবশ্য ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে ভবন নির্মাণের ব্যয়ও আগের তুলনায় বেড়েছে। মূলত এ কারণে ফ্ল্যাটের দামও কিছুটা বাড়তি। আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়ার কারণে বর্গফুটপ্রতি খরচ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেড়েছে। বর্গফুটপ্রতি যদি ৫০০ টাকা খরচ বাড়ে তাহলে গ্রাহকদের ওপর পড়ে এক হাজার টাকা। কারণ, ভবনমালিককে জমির ভাগ বাবদ ৫০ শতাংশ ফ্ল্যাট দেওয়া হয়। আর এই বাড়তি খরচ তুলে আনা হয় ক্রেতার কাছ থেকেই।  

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহাবের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী প্রথম আলোকে সম্প্রতি বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণ উপকরণের দাম বাড়তি। দুই বছর আগে টনপ্রতি রড যেখানে পাওয়া যেত ৬৫-৭০ হাজারে, এখন তা ৯০-৯৫ হাজার টাকা। প্রতি বস্তা সিমেন্ট ৪২০-৪৩০ টাকার বদলে এখন ৫৩০-৫৪০ টাকা। কাঁচামালের সংকটে টাইলস এখন সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্মাণ উপকরণের কারণে যেটুকু খরচ বেড়েছে, সেটাই সমন্বয় করতে হচ্ছে।