দেশে প্রতি লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১২৭ স্বাস্থ্যকর্মী

চিকিৎসকপ্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিপুল জনবল ঘাটতি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করতে হলে প্রতি এক লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ৪৪৫ চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ থাকা দরকার। কিন্তু দেশে প্রতি লাখ মানুষের সেবায় আছে মাত্র ১২৭ চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ। এ পরিস্থিতির উত্তরণে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত স্বাস্থ্যবিষয়ক এক জাতীয় কর্মশালায় দেশি-বিদেশি স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে স্বাস্থ্যব্যবস্থা দৃঢ়করণবিষয়ক এ কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্মার্ট ইউনিভার্সাল কাভারেজ নেটওয়ার্ক (বাসুন) নামের নাগরিক সংগঠন।

কর্মশালার শুরুতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আয়োজক সংগঠনের প্রধান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা আমাদের জানা। এ নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে। এখন সমাধান কী, সেটাই বের করতে হবে। সমাধান বা করণীয় ঠিক করার জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।’

স্বাস্থ্য খাতের ছয়টি বিষয় কর্মশালায় তুলে ধরা হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা দৃঢ়করণ; দৃঢ় রেফারেল পদ্ধতি চালু করা; নগর এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা; রোগ প্রতিরোধ, অত্যাবশ্যকীয় সেবা ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা; স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে চিকিৎসকদের পেশাজীবন পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্য খাতে কমিউনিটিকে সম্পৃক্তকরণ, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও চিকিৎসকদের অধিকার।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা ছয়টি দলে বিভক্ত হয়ে এসব বিষয়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি তালিকা তৈরি করেন। ছয়টি দল থেকে প্রায় ৯০টি সমাধান তৈরি হয়। পরে সমাপনী পর্বের আগে সেগুলো সবার সামনে উপস্থাপন করা হয়।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজের পকেটের ব্যয় বেশি হওয়ার একটি কারণ ওষুধের ব্যয়। ওষুধের ব্যাপারে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। সরকার যদি ওষুধ খাতে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে, তাহলে ৩০০ টাকার সুফল পাওয়া যায়।

প্যানেল আলোচনায় ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু মোহাম্মদ শামীম সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, সরকার বেসরকারি খাত থেকে সেবা কিনতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে সেই সেবার মূল্য সরকারি সেবার চেয়ে কম হতে পারে।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর মনে হয়েছিল, তিনি সাগরে পড়েছেন। কর্মশালায় সুপারিশ শুনে তাঁর মনে হয়েছে সমস্যার সমাধান আছে।

এই পর্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বেগম রোকেয়া সুলতানা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রবীণ চিকিৎসক অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ ও বেসরকারি সংস্থা এমিনেন্সের নির্বাহী পরিচালক শামীম হায়দার তালুকদার।

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বেশ কয়েক সংসদ সদস্য, ইউনিসেফ ও ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের দুই মহাপরিচালক, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য–শিক্ষকসহ প্রায় ১০০ স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ অংশ নেন।